জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ৯০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে৷ বায়োএনটেকের প্রতিষ্ঠাতা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ উগুর শাহিন এবং তার স্ত্রী টিকাবিজ্ঞানী ওজলেম টুরেসি৷ তারা দুজনই তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক৷
জার্মান শহর মাইনৎসে ১২ বছর আগে বায়োএনটেকের পথচলা শুরু হয়৷ এই দম্পতির তৈরি বায়োএনটেকে এখন কাজ করে ১৫০০ কর্মী৷ ৫৫ বছর বয়সি শাহিনের জন্ম তুরস্কে৷ বাবা-মায়ের সঙ্গে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি৷ মেডিসিন এবং গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷
৫৩ বছর বয়সি টুরেসির জন্ম জার্মানিতে৷ কিন্তু তার বাবা-মা তুর্কি৷ হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি৷ ইমিউনোলজিস্ট টুরেসি ক্যানসার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন৷
শাহিন কোলোন এবং হামবুর্গে দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন৷ ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন৷ মলিকিউলার মেডিসিন এবং ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন৷ ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেন৷ ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি৷
২০০০ সালের জানুয়ারিতে শাহিন করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন৷ তখনই তার আশঙ্কা হয় এটি মহামারি রূপ নেবে৷ সেসময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর শাহিন জানিয়েছেন, তাদের তৈরি টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে৷ যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও তিনি বলেছেন, ‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে৷’
যাদের আগে কখনো করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে যে টিকা দেয়ার পর শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করলেও তাদের কোভিড-১৯ হয়নি৷ জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের এ ট্রায়ালে ৪৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন৷ মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএর অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি৷
এদিকে ইতিমধ্যে ফাইজার ও বায়োএনটেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকা সরবরাহে এরই মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের চুক্তি সই করেছে৷ চুক্তি সই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপানের সঙ্গেও৷ ২০২০ সালেই প্রতিষ্ঠান দু’টি পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করবে। ২০২১ সালে আরো ১৩০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিজার৷
শাহিনের সঙ্গে প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করেছেন মাইনৎসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকলজির অধ্যাপক ম্যাথিয়েস্ট থ্রিইবাল্ট। তিনি বলেন, ‘শাহিন খুব বিনয়ী একজন মানুষ। বাইরে থেকে তাকে দেখে বোঝার উপায় নেয়। তার ভিশন বাস্তবায়নের জন্য তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি মেডিসিনের আবিষ্কারের জন্য নতুন একটি পথ বের করতে চান।’ সূত্র: রয়টার্স ও ডয়চে ভেলে।