৭ ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত দিবস

৭ ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত দিবস

শেরপুর প্রতিনিধি:

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর অঞ্চলকে শত্রু মুক্ত করে।


এদিন মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক প্রয়াত জগজিৎ সিং অরোরা হেলিকাপ্টারযোগে নেমে শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্ক মাঠে এক সংবর্ধনা সভায় শেরপুরকে মুক্ত বলে ঘোষণা দেন। এসময় মুক্ত শেরপুরে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এখানে দাড়িয়েই তিনি বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা, মস্কো, আকাশবাণীসহ বিভিন্ন বেতার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঢাকা মুক্ত করার আশাবাদ ব্যাক্ত করেছিলেন।


এসময় মিত্র বাহিনীর প্রধানকে শেরপুরের বিশিষ্ট নাগরিক মোহাম্মদআলী মিয়া, ডাক্তার জামান, খন্দকার মজিবুর রহমান, মোজাম্মেল হক, পন্ডিত ফসিহুর রহমান প্রমূখ সংবর্ধনা দেয়।


স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে বর্তমান শেরপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ৩০ থেকে ৪০টি খন্ডযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। এসব যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে ৫৯ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন।


পাক হানাদারদের নির্মমতার শিকার হয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৮৭ জন, শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদী গ্রামে ৫২ জন, ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে ২০ জন মুক্তিকামী মানুষ শহীদ হয়েছেন।
পাকবাহিনীরা প্রথমে শেরপুরে প্রবেশ করে বর্তমান শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার আহম্মদনগর উচ্চবিদ্যালয়ে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে তাদের নারকীয় গত্যাযজ্ঞ চালায়।

এছাড়া শেরপুর জেলা শহরের নয়আনী বাজার এলাকার তৎকালীন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ও দনবীর বলে খ্যাত সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাসা দখল করে নিয়ে স্থানীয় রাজাকার আলবদররা টর্চার সেল তৈরী করেন।


১১নং সেক্টরের আওতায় জামালপুরের কামালপুর ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হওয়ার পর পাকহানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় শেরপুরে পাকবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। কামালপুর দুর্গ দখল হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাকবাহিনীর সকল ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে যায়।


৪ ডিসেম্বর কামালপুরের ১১ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের মূহুমূহু আক্রমান ও গুলি বর্ষনের মুখে স্থানীয় পাকসেনারা পিছু হটে। ৫ ডিসেম্বর থেকে পাকসেনারা তল্পিতল্পা বেঁধে কামালপুর-বক্সিগঞ্জ থেকে শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলা হয়ে শেরপুর শহর হয়ে জামালপুর অভিমুখে রওনা হয়।


অবশেষে পাকসেনারা ৬ ডিসেম্বর রাতের আধারে শেরপুর শহরের উপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এরপর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শেরপুর।


স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ জেলায় ১ জন বীর বিক্রম ও ২ জন বীর প্রতিক খেতাব পেয়েছেন। এরা হলেন শহীদ মু’তাসিম বিল্লাহ খুররম (বীর বিক্রম), কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সী (বীর প্রতিক) ও ডা: মাহমুদুর রহমান (বীর প্রতিক)। এছাড়া সোহাগপুরের বিধবাদের মধ্যে ১৩ জন পেয়েছেন বিরঙ্গনা সংবর্ধনা।

আপনি আরও পড়তে পারেন