ঘন কুয়াশা ও তীব্র শৈত্য প্রবাহে ‘বিপর্যস্ত’ জীবনযাপন।

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শৈত্য প্রবাহে ‘বিপর্যস্ত’ জীবনযাপন।

সাধন রায় লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ

লালমনিরহাটে  ঘন  কুয়াশা  ও  তীব্র  শৈত্য প্রবাহে ‘বিপর্যস্ত’ হয়ে পড়েছে জনজীবন। পৌষের শুরুতে কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় ভারতীয় সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার জনজীবন একেবারে কাহিল। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ। আর এসব রোগের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দিনে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে কমপ‌ক্ষে শতা‌ধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। যার অধিকাংশই শিশু।

কয়েকদিনের  তীব্র  শীতে  লালমনিরহা‌টের তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। বিশেষ করে তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর চরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র মানুষের অবস্থা শোচনীয়। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। সবচেয়ে বেশী প্রভাব পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে। বিশেষ করে রেল স্টেশনসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকারী ছিন্নমুল মানুষগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। শীতার্ত মানুষগুলো এক টুকরো গরম কাপড়ের জন্য তাকিয়ে আছে সরকার ও বিত্তবানদের দিকে।

জেলার  ৫টি  উপজেলার  নদী  অধ্যুষিত ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরাঞ্চলগুলোতে হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষ সরকারী শীতবস্ত্ররের জন্য পথ চেয়ে বসে আছে। তাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন জরুরী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি শৈত্য প্রবাহের কারনে শিশুদের মধ্যে শীতজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটের ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার কয়েক হাজার শীতার্ত অসহায় গরীব মানুষ পৌষের হাড় কাঁপানো কনকনে শীতের কারণে ঘর থেকে বের হতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতেও সন্ধ্যার পর পরেই দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকজনের চলাচলও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম।

হাটবাজারের পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের লোকজনের ভীর দেখা যাচ্ছে। তবে এ সকল শীত বস্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় অভাবী লোকগুলো কিনতে পারছে না তাদের প্রয়োজনীয় সেসব শীতবস্ত্র। তীব্র শীতের কারনে জেলায় শীতবস্ত্র বিতরন জরুরী হয়ে পড়েছে। এভাবে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকলে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানান রোগব্যাধী।

পেটের টানে কিছু দিনমজুর ঘর থেকে বের হলেও শীতের কারনে কাজ খুজে পাচ্ছেন না। শীতের পোশাক না থাকায় নিম্ন আয়ের অনেকেই পড়েছেন বিপাকে। জেলায় সরকারী ভাবে কিছু কিছু এলাকায় শীতার্তদের মাঝে গরম কাপড় বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই সামান্য। সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের তিস্তা পাড়ের দিনমজুর মো. জাহেদুল হক বলেন, চরে বসবাসকারী আমরা এখানকার কয়েক হাজার মানুষ ভীষণ কষ্টে আছি। কেউ আমাদের কোন খবর নেয় না; কোন প্রকার শীতবস্ত্র বা একটা কম্বলও দিচ্ছে না আমাদের। যাতে করে আমরা চরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষগুলো শীত নিবারন করতে পারি। আমরা কয়েক হাজার মানুষ কঠিন এই শীতে মানবেতর জীবনযাপন করছি।

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়ছে হিমালয়ের পাদদেশের লালমনিরহাট জেলার মানুষ। ঠান্ডার দাপটে নিদারুণ কষ্টে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চরম কষ্টে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া ও চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ। সরকারী ও বে-সরকারীভাবে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা অব্যাহত রয়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে।

লালমনিরহাট    জেলা    আওয়ামীলীগের সাধারন   সম্পাদক   ও   জেলা   পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড‌ভো‌কেট মো. মতিয়ার রহমান বলেন, জেলায় অনেক শীতার্ত মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারীভাবে এসব শীতার্ত মানুষের শীতবস্ত্র বিতরন করা হলেও তারপরেও বাকী থেকে যাচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন