ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধ ভাটায় পুড়ছে ইট, নিরব প্রশাসন

ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধ ভাটায় পুড়ছে ইট, নিরব প্রশাসন

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঠাকুরগাঁওয়ের অধিকাংশ ইটভাটা অবৈধভাবে চালালেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে ওঠায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশেও। এ অবস্থায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েও সমাধান মেলেনি বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। আর জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, সারাদেশের ইটভাটাগুলো এভাবেই চলছে। তবুও আইন অমান্য করে যেসব ইটভাটা চলছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 
 
সরকারি নির্দেশনা রয়েছে ইটভাটা স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী অনুমোদন নিতে হবে। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মিরাজ-১ ও মিরাজ-২ ইটভাটা চলছে নিয়মিত। এদিকে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা স্থাপনের ফলে বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকায় আমবাগান চাষি ও প্রায় দুই হাজারের বেশি কৃষক। 

চলতি বছরে স্থানীয় কৃষক ও আমবাগান মালিকদের বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মার্চে সরেজমিন তদন্ত করতে আসেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে গত ১০ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেজবাউল আলমের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ওই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদানও করা হয়। 

একই মাসের ১৬ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেজবাউল আলমের স্বাক্ষরিত আরেকটি পত্রে ওই ইটভাটার পার্শ্বে বিশ্রামপুর উত্তর পাড়া দাখিল মাদ্রাসার অবস্থান উল্লেখ করে নিয়ম অনুযায়ী ইটভাটা স্থাপন করা হয়নি মর্মে দ্রুত ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়।

তারপরও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করোনাকালেও ইটভাটায় পুড়ছে ইট। পুরো দমে চলছে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতির কাজ। ভাটার চারপাশে স্তুপ করা হয়েছে কয়েকশ মণ কাঠ। 

এদিকে সদরে অবস্থিত কেএম ব্রিক্স ও কেএস ব্রিক্স নামের ইটভাটা কৃষি জমিতে গড়ে ওঠায় ক্ষতির শিকার হয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন সদরের বদেশ্বরী গ্রামের কৃষক মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী। তবে তার অভিযোগ তদন্তেই সীমাবদ্ধ, কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

কৃষক মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে এভাবেই চলে বছরের পর বছর ইটভাটাগুলো। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। আমরা কৃষকরা বরাবরই ক্ষতির শিকার হচ্ছি। এছাড়া জেলায় যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে মারাত্মকভাবে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন জানান, যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কোন ইটভাটা চলে, যদি পরিবেশ অধিদপ্তর ওই ভাটা বন্ধের জন্য আমাদের সহযোগিতা চায় তাহলে আমরা সকল ধরনের সহযোগিতা করবো। 

ঠাকুরগাঁওয়ে কয়টি ইটভাটায় ইট পোড়ানো হয় তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য মতে জানা গেছে, জেলায় ১১৯টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার কোনোটিরই জেলা প্রশাসনের অনুমতি সনদ (লাইসেন্স) নেই।

আর পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয় সূত্র মতে, জেলার ইটভাটার সংখ্যা ১২১টি। এর মধ্যে তিনটির পরিবেশ ছাড়পত্র থাকলেও দুইটির নবায়ন নেই। পরিবেশ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স না থাকলেও চলতি মৌসুমে অবৈধ সেসব ভাটায় ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অমান্য করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এতে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতি হলেও নিরব প্রশাসন । 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, সারাদেশেই এভাবে ইটভাটাগুলো চলে। এসব নতুন কিছু নয়। যেসব ইটভাটা আইন অমান্য করে চলছে সেগুলোর বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 

আপনি আরও পড়তে পারেন