দায়িত্ব ফেলে বেশী টাকার লোভে প্রাইভেট ক্লিনিকে যান সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

দায়িত্ব ফেলে বেশী টাকার লোভে প্রাইভেট ক্লিনিকে যান সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
উজ্জ্বল হোসাইনঃ নিজস্ব প্রতিবেদক
দায়িত্বে ফাঁকি দিয়ে সাভারের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে অপারেশনসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে সাভার  উপজেলার সাবেক আরএমও ও অর্থপেডিক কোর্সে অধ্যায়নরত এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে। তবে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০ মে সরকারী দায়িত্ব ফেলে রেখে সাভারের সুপার ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে তিনি অপারেশন করছিলেন বলে জানা যায়।
অভিযুক্ত ডাক্তার সাভার উপজেলার সাবেক আরএমও ও বর্তমান ধামরাইয়ের কৃষ্ণনগরের সরকারি ২০ শয্যা হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডাঃ নুসরাত জাহান।
তার সঙ্গী হিসাবে ছিলেন ৩৩ তম বিসিএস ক্যাডার (কোড ১২৯৯৬৫) কামাল হোসেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অর্থপেডিক কোর্সে অধ্যায়নরত আছেন। পোস্ট গ্রাজুয়েশন ছাড়াই তিনি সুপার ক্লিনিকে এনেস্থিসিয়া করে আসছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভারের ওই হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে সরকারী দায়িত্ব পালন না করে টাকার মোহে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্তরা।
২০ মে দুপুর ২ টায় সাভারের ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে যান ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন মইনুল আহসান, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সায়েমুল হুদা,  ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুর রিফফাত আরাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। এসময় সুপার ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে  ধামরাইয়ের কৃষ্ণনগরের ২০ শয্যা হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডাঃ নুসরাত জাহান ও ৩৩ তম বিসিএস ক্যাডার (কোড ১২৯৯৬৫) কামাল হোসেনকে দেখতে পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য কর্মকতা বলেন, ক্লিনিক পরিদর্শনের সময় সরকারি অফিস টাইমে নুসরাত জাহান ও কামাল হোসেন সুপার ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে ছিলেন। তবে এর বেশি কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
সুপার ক্লিনিকের ম্যানেজার হুমায়ন বলেন, আমাদের ক্লিনিকে তারা পরিদর্শনে এসেছিলেন, তবে তখন কয়টা বাজে এটা আমার মনে নেই।
এব্যাপারে পরিদর্শনে  ঢাকা জেলা সিভিল সার্জনের সাথে থাকা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামেুল হুদা  বলেন, আমারা সাভারের সুপার ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে ২ টা ৩৭ মিনিটে পাই। আমরা মুলত তাকে অফিস টাইমের পরেই পেয়েছি।
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ডাক্তার নুর রিফফাত আরা বলেন, আমরা দু্ইটার সময় যাই নি। আমরা তো গিয়েছি আড়াইটার পরে। দুইটার সময় তো আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকে। টাইমের পরে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ২ টা ৩৭ মিনিটে তো আমরা ওটিতে ঢুকি নি। তবে পরে তিনি বলেন আমরা ২ টা ৩৭ মিনিটে ক্লিনিকে ঢুকেছি। ধামরাই থেকে ৭ মিনিটে কিভাবে ডাক্তার নুসরাত জাহান সাভারের সুপার ক্লিনিকে আসলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২ টার পরেও আমরা সিভিল সার্জন মহোদয়ের সাথে কমিউনিটি ক্লিনিক ভিজিট করছিলাম। আমরা একই জায়গা থেকে যদি আড়াইটার পরে রওনা দিয়ে সাভারের ওই ক্লিনিকে পৌছতে পারি তাহলে উনিও তো পৌছতে পারেন , তাই না।
তবে ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নের কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, তাদের ওই এলাকা থেকে সাভারের দুরুত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার। মোটরসাইকেল যোগে আসতে সময় লাগে কমপক্ষে ৪০ মিনিট, আর প্রাইভেটকারে আসতে সময় লাগবে ১ ঘন্টারও বেশী। এই ইউনিয়নের রাস্তাঘাট অনেক ভাঙ্গাচুড়া। তাছাড়া রাস্তাও তো অনেক। স্বাভাবিক সড়ক থাকলেও ৩৫ মিনিটের বেশি লাগে।
উপজেলার সাবেক আরএমও ও বর্তমান ধামরাইয়ের কৃষ্ণনগরের ২০ শয্যা হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডা. নুসরাত জাহান ও তার সঙ্গী  ৩৩ তম বিসিএস ক্যাডার (কোড ১২৯৯৬৫) কামাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের কাউকেই পাওয়া যায় নি। এমন কি ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তারা কোন উত্তর দেন নি।
ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন মইনুল আহসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনিও আমাকে চেনেনা আমিও আপনাকে চিনিনা আপনাকে তথ্য দেবো কেন? তবে দুইটার সময় সাভারের সুপার ক্লিনিক পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জি গিয়েছিলাম। নুসরাত জাহানকে ওটিতে পেয়েছিলেন কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না আমি পাই নি। এভাবে আমি ফোনে তথ্য দেই না। আপনি অফিসে আসেন।
ঢাকা বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের ডিরেক্টর ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, এধরনের কোন ঘটনা জানা নেই। তবে এধরনের কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন