বগুড়ায় বছরে ৭০ লাখ টাকার ঘাস বিক্রি

বগুড়ায় বছরে ৭০ লাখ টাকার ঘাস বিক্রি

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ঘাসের বাজার। উপজেলার ১৫-২০টি স্থানে সপ্তাহে তিন-চার দিন বসে এ বাজার। বাজারগুলোতে নেপিয়ার জাতের ঘাস বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। এ উপজেলায় বছরে ৭০ লাখ টাকার ঘাস কেনাবেচা হয় বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সারিয়াকান্দি, নিজবলাইল, হাসনাপাড়া, নারচী, হাটকরমজা, শেখাহাটি, কুপতলা, হাটফুলবাড়ী, রামচন্দ্রপুর, ছাগলধরা, জোড়গাছা, কড়িতলা, কুতুবপুর, ডেবডাংগা, মথুরাপাড়া এবং চরে উঠেছে ঘাসের ভিন্ন ভিন্ন বাজার। এসব বাজারে ঘাস বেচাকেনায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতা। বাজারগুলোতে দুপুরের পর থেকে বেচাকেনা শুরু হয়, শেষ হয় এশার নামাজের পর।

উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিসের মাঠকর্মী রেজাউল করিম জানান, সারিয়াকান্দির ১২ ইউনিয়নের প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবারের লোকজন বিভিন্ন ধরনের পশুপালনের সঙ্গে জড়িত। তাদের প্রতিটি পরিবারে একটি বা একের অধিক গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ বা গাড়ল রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে একাধিক পশু খামারি। এসব পশুগুলোকে দানাদার খাবারের পাশাপাশি দৈনিক একবার করে হলেও সবুজ ঘাস খাওয়াতে হয়। আর তাই কাঁচা ঘাস কিনতে খামারিরা ছুটেন ঘাসের বাজারে।

সারিয়াকান্দি সদরের পারতিতপরল গ্রামের গরুর খামারি শ্যামল মিয়া জানান, দানাদার খাবারের পাশাপাশি দুধেল গরুকে কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হয়। এতে দুধ অপেক্ষাকৃত বেশি পাওয়া যায়। এ জন্য প্রতিদিন আমি ঘাস কিনে নিয়ে আসি।

সারিয়াকান্দি প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার গরু, প্রায় ৩ হাজার মহিষ, অসংখ্য বিভিন্ন জাতের ছাগল, ভেড়া এবং গারল রয়েছে। এসব পশুর জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন কাঁচা ঘাস প্রয়োজন হয়। উপজেলায় প্রায় ৮শ একর গোচারণভূমি রয়েছে। এসব চারণভূমি থেকে পশুরা সরাসরি ঘাস খায়।

উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাফিউল আলম জিকো বলেন, গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য কৃষকরা এখন নেপিয়ার ঘাস ব্যাপকভাবে চাষ করছেন। তারা জমির আইল, রাস্তার দুই পাশে, বাড়ির আঙিনার পতিত জমিতে এ জাতের ঘাস চাষ করছেন। অথচ দুই থেকে তিন বছর আগেও এ ধরনের ঘাস চাষ সচরাচর দেখা যায়নি। নিজেদের গবাদিপশুকে খাইয়ে অতিরিক্ত ঘাস বাজারে বিক্রি করেন।

উপজেলার হাটফুলবাড়ী বাজারের ঘাস ব্যবসায়ী মইফুল ইসলাম জানান, আমার নিজের কোনো জমি না থাকায় ঘাস ব্যবসার সঙ্গে বহু বছর ধরে যুক্ত আছি। বেচাকেনা এখন আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

উপজেলার নারচী ইউনিয়নের ছাগলের খামারি জামাল বাদশা বলেন, সারাদিন ছাগলকে চড়িয়ে খাওয়ানোর পরও যদি পেট না ভরে, তাহলে বাজার থেকে কাঁঠালের পাতা কিনে ছাগলকে খাওয়াতে হয়।

সারিয়াকান্দি বাজারে ঘাস ক্রেতা জুয়েল মিয়া জানান, আমার চারটি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দুটি দুধের গাভী রয়েছে। সারাদিন বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যস্ত থাকায় আমি জমি থেকে ঘাস সংগ্রহ করতে পারি না। তাই বাজার থেকে ঘাস কিনে গরুকে খাওয়ায়।

সারিয়াকান্দি বাজারের ইজারাদার জালাল উদ্দিন প্রামানিক জানান, বাজারে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার বিভিন্ন জাতের ঘাস বিক্রি হয়। এ ছাড়া উপজেলার অন্যান্য বাজারগুলোতে দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি হয়। এর মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই নেপিয়ার ঘাস। বছরে সারিয়াকান্দির ঘাসের বাজারে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার ঘাস বেচাকেনা হয়।

সারিয়াকান্দি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকি বলেন, উপজেলায় পশুপালন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশুর সংখ্যা বাড়াতে ঘাসের চাহিদাও বেড়েছে। এর ফলে হাটগুলোতে গড়ে উঠছে ভিন্ন ভিন্ন ঘাসের বাজার।

আপনি আরও পড়তে পারেন