যতই চাপ দেন এখন ডেলিভারি দেয়া সম্ভব না: ইভ্যালি সিও

যতই চাপ দেন এখন ডেলিভারি দেয়া সম্ভব না: ইভ্যালি সিও

আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সিও মোহাম্মদ রাসেল বলেছেন, আপনারা আমাকে ৬ মাস সময় দেন, আমি প্রত্যেকটি ডেলিভারি সম্পূর্ণ করবো৷ আপনারা যদি পেশার ক্রিয়েট করেন আমাদের আসলে কিছু করার নেই। আমরা জেলে গেলে আপনারা প্রোডাক্ট পাবেননা। আমাদেরকে সময় দেন প্রোডাক্ট পাবেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ অগাস্ট) রাত ১১ টায় ফেসবুক লাইভে এসে এ কথা জানান তিনি।

 

তিনি আরও বলেন, আড়াই বছরে ইভ্যালির যে বিজনেস ডেভলপমেন্ট হয়েছে তা আর কারো নেই। আগামী দিনে বাংলাদেশের ই-কমার্স পৃথিবীতে উদাহরণ তৈরি করবে বলে জানিয়েছে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল ।

ইভ্যালির সিইও বলেন, “আমরা একটি সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। রেগুলার কমিটমেন্ট টাইমের মধ্যে আমরা ডেলিভারী দিতে পারছি না। এটি শিকার করতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।”

ডিসকাউন্টের সমালোচনার জবাব দিয়ে তিনি বলেন, “ডিসকাউন্ট হচ্ছে ই-কমার্সের পার্ট অফ জার্নি।ই-কমার্স ডেভেলপমেন্টের জন্য ডিসকাউন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।ফান্ড রেইজ করে এই ডিসকাউন্টের ক্ষতি রিকভার করা হবে।”

বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের ই-কমার্সের জন্য গৃহীত নতুন নীতিমালাকে সাধুবাদ জানালেও এটি কিছু সমস্যা তৈরি করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, “আমরা বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।তবে সমস্যা তৈরি হচ্ছে যেহেতু ই-কমার্সের নীতিমালা নতুন আঙ্গিকে প্রয়োগ হচ্ছে।যার ফলে ই-কমার্সের প্রতিটি স্টেপে সাময়িক ভীতি তৈরি হচ্ছে।রেভিনিউ ড্রপ হওয়াতে একটি অসামঞ্জস্যতা তৈরি হচ্ছে। বিজনেজ প্ল্যানে এভাবে পরিবর্তন আসবে তা ইভ্যালি বুঝতে পারেনি। পরিবর্তন হঠাৎ আসাতে ই-কমার্সের সবাই একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে।ফলে ডেলিভারি সিস্টেমে সাময়িক কিছুটা গতি কমেছে”।

ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান যমুনা গ্রুপ। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে যমুনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যমুনার বিনিয়োগে অনেক পেপার ওয়ার্কের বিষয় আছে। বিনিয়োগ পাওয়ার পর সাপ্লাই চেইন অনেক বেশি ফাস্ট হবে।”

নিজের দেশ ত্যাগের শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে রাসেল বলেন, “আমি পার্সোনাল এমন কোনো এসেট তৈরি করিনি যাতে আমি দেশ ছেড়ে পালাবো। আমার লাইফে লাক্সারী বলে কিছু নেই। আমার ব্যবহার করা গাড়িটাও অফিসিয়াল গাড়ি।”

এত সমস্যার মধ্যেও ইভ্যালির সিইও আশাবাদ ব্যক্ত করেন দ্রুতই এই সমস্যাগুলো কেটে যাবে। আর এরপর যা হবে সেটি দেখার জন্য তিনি অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত।

রবিবার অফিস খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, এদিন অনেকেই বসে আছে ইভ্যালিকে বন্ধ করে দিতে। খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকেই সেদিন আসবে। আপনারা যারা ইভ্যালিকে ভালবাসেন তারা ওইদিন অফিসে আইসেননা। আমাদেরকে একটু সময় দিন।

রাসেল বলেন, “অনেকে বলতেছেন ক্রেতারা দলবেঁধে আসবেন, কিছু একটা হবে। অনেকে ওই দিন লাইভ করতে যাচ্ছেন। এভাবে জোর করে যেহেতু বেনিফিট আসতেছে না। আপনারা চেষ্টা করুন, অ্যাপয়েন্টমেন্টের বাইরে না আসার।”

“রোববার থেকে অন্তত ১৫টা দিন আমাদের সাথে অ্যাপয়েণ্টমেন্ট ছাড়া আসবেন না। গ্রুপ করে আইসেন না। কারণ আপনারা আসবেন পজিটিভ সেন্সে, এইটাকে ক্যাপিটালাইজ করে একটা এক্সিডেন্ট হবে। আপনাদের ছোট্ট কিছু ভুলের জন্য সবগুলো ব্যাপার এলোমেলো হয়ে যাবে। ব্যাড ইনটেনশনের লোক যখন চান্স নিতে আসবে না, তখন আপনারা আইসেন।”

রাসেল বলেন, “অনেকে ভাবতেছে যে ইভ্যালি এভয়েড করতে চাচ্ছে কি না। আমি নিজেকে হাইড করতে চাই না। অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন যে আমরা দেশ ছাড়ি কি না। আমার মাথায় কখনোই আসেনি এটা।

বাংলাদেশ ব্যাংকও দেখেছে যে আমার কোনো অ্যাসেট নেই। তাহলে আমি কী নিয়ে পালাব? নিয়ে যাওয়ার মতো কিছু আমি করি নাই। অনেকে আমার গাড়ি নিয়ে কথা বলে। এই গাড়ি কিন্তু কোম্পানির নামে এবং যে কোনো সময় বিক্রি করে দেওয়ার মতো।

এখনও মাসে ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে দাবি করে রাসেল বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের দুটি পথ খোলা আছে। হয়ত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে, নয়ত বিক্রিটা নিয়মিত রাখতে হবে।

“আমরা ইক্যুইটি সেল করে ফান্ড রেইজ করব। যমুনা গ্রুপের সঙ্গে আমাদের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে সময় লাগবে।”

পণ্য বরবরাহ চালু রাখতে চাইছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এখন অফ হয়ে যাওয়া ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে লক খোলার কাজটি করছি। টিটেন ক্যাম্পেইন দিয়ে সেটা করার চেষ্টা করছি। ১০০ টাকার অর্ডার পেলে ৫০ টাকার পুরোনো অর্ডার ডেলিভারি করতে পারি। এটাই আমাদের বর্তমান সমাধান।”

রাসেল গ্রাহকদের উদ্দেশে বলেন, “যতই প্রেসার দেন না কেন চেক দেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। আমরা পণ্যই দেব। আপনারা যদি বলেন চেক না দিলে আর সময় দেব না, তাহলে আর সময়ও চাইতে পারব না। দিলে পরদিনই মন্ত্রণালয় থেকে বড় ধরনের অ্যাকশন চলে আসবে।

“এখন প্রায়োরেটি পয়েন্ট যাদের বেশি তাদের ডেলিভারিটা ফার্স্ট হচ্ছে। তাই আপনারা প্রাইরোটি পয়েন্টে কেনাকাটা বাড়ান।”

প্রসঙ্গত, অগ্রিম টাকা নিয়েও মাসের পর মাস গ্রাহকের পণ্য বুঝিয়ে না দেওয়া এবং বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেক বা তার চেয়েও কম দামে পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিয়ে বেচাকেনার স্বাভাবিক ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য সমালোচিত হচ্ছিল ইভ্যালি।

আপনি আরও পড়তে পারেন