‘তোর বেঈমানি ও পরকীয়ার জন্য আত্মহত্যা করলাম’

‘তোর বেঈমানি ও পরকীয়ার জন্য আত্মহত্যা করলাম’

‘আর পাঁচটা মানুষের মতো আমার জীবন না।  আজ চলে যাচ্ছি। মনে রাখিস তোর বেঈমানি ও পরকীয়ার জন্য আত্মহত্যা করলাম।’ নিজের স্ত্রীর হোয়াটস অ্যাপে এমন মেসেজ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বারপাড়া এলাকার এমরান হোসেন মুন্না (২৯) নামে এক যুবক। তিনি ওই এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে।

এ ঘটনায় মতিউর রহমান বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় পুত্রবধূ সৈয়দা সাজিয়া শারমিন ঊষাকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। গত বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন মুন্না। তার মৃত্যুর এক দিন পর স্ত্রীকে পাঠানো মেসেজ ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আট বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর পরিবারের অমতে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি বিয়ে করেন মুন্না ও ঊষা। বিয়ের পর এক বছর ভালোভাবেই চলছিল তাদের সংসার। বছরখানেক পর স্ত্রী ঊষা বায়না ধরেন ঢাকায় লেখাপড়া করবেন। স্ত্রীর আবদার রক্ষায় তাকে উচ্চ শিক্ষিত করতে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান মুন্না। স্বামীর দেওয়া খরচে ঢাকায় এক কাজিনের সঙ্গে থেকেই লেখাপড়া করছিল ঊষা। পরবর্তীতে ঊষা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি নেমে আসে।

সোহেল নামে ঢাকার স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তাকে কুমিল্লা চলে আসতে বলেন মুন্না। এতে বাঁধ সাধেন স্ত্রী ঊষা। একপর্যায়ে উষাকে অনুরোধ করতে থাকেন কুমিল্লায় চলে আসার জন্য। কোনোভাবেই রাজি করাতে না পেরে অবশেষে গত ২২ সেপ্টেম্বর শেষবারের মতো অনুরোধ করে হোয়াটস অ্যাপে বার বার মেসেজ করেন। নিজ সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন স্ত্রী ঊষা। শেষপর্যায়ে মুন্না স্ত্রীকে জানান না এলে আত্মহত্যা করবেন।

তবে স্ত্রী ঊষা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন আত্মহত্যা করলেও তার কিছু যায় আসে না। এরপরই নিজের রুমের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে কয়েকটি ভিডিও পাঠিয়ে শেষ বারের মতো স্ত্রীকে অনুরোধ করেন চলে আসার জন্য। জবাবে নিজের ভবিষ্যৎ গড়া আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে মুন্নার সঙ্গে সংসার না করার কথা জানান ঊষা। এরপর নিজের বন্ধুদের উদ্দেশ্য কিছু কথা মেসেজে লিখে সিলিং ফ্যানে ঝুলানো ওড়না গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন মুন্না।

নিহত মুন্নার বাবা মতিউর রহমান বলেন, আমার ছেলে রাগ ও ক্ষোভে আত্মহত্যার প্রস্তুতির ছবি তুলে ঊষাকে পাঠায়। বিষয়টি আমাদের পরিবারের কাউকে না জানিয়ে উল্টো তাকে আত্মহত্যার করার উসকানিমূলক কথা বলে তার মানসিক অবস্থা আরও খারাপ করে ফেলে ঊষা। এছাড়া বিভিন্ন সময় আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। মুন্না আমার বড় ছেলে। সে দীর্ঘদিন ঊষাকে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করেছিল। মুন্না ও ঊষার মেসেজে কথোপকথন ও ভিডিওর তদন্ত করে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

নিহত মুন্নার ছোট ভাই ইমাম বলেন, কিছুদিন ধরে বড় ভাই মুন্নার কাছে তার স্ত্রী জেলার লাকসাম উপজেলার খিল্লাবাজার রাজাপুর গ্রামের সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে ঊষা বিভিন্নভাবে ঢাকায় লেখাপড়ার খরচের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করতে থাকে। মুন্না চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলেই তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময় মুন্নাকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে ঊষা। গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শব্দ শুনে বড় ভাই মুন্নার ঘরে উঁকি দিয়ে তাকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পাই। দ্রুত দরজা ভেঙে তাৎক্ষণিক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ রাতেই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মুন্নার মরদেহ দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও নিহত মুন্নার স্ত্রী অভিযুক্ত সৈয়দা সাজিয়া শারমিন ঊষার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) আনওয়ারুল আজিম বলেন, নিহতের স্ত্রী ঊষাকে আসামি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন