ভালোবাসার জন্য সবকিছু ছাড়লেন জাপানের রাজকুমারী

জন্ম-বেড়ে ওঠা রাজপ্রাসাদে, কিন্তু প্রেমে পড়েছেন সাধারণ ঘরের এক ছেলের। বাগদানের চার বছর পর অবশেষে ভালোবাসার মানুষকে বিয়েও করছেন, তবে সেজন্য ছাড়তে হচ্ছে রাজকীয় মর্যাদা, পদবী ও সম্পদ।

জাপানের রাজকুমারি মাকোর জীবনের এই গল্প উঠে এসেছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। জাপানের রাজপরিবারের দেখভালের দায়িত্বে থাকা দফতরের বরাত দিয়ে শুক্রবার বিবিসি জানিয়েছে, আগামী ২৬ অক্টোবর বিবাহবন্ধনে বাঁধা পড়তে যাচ্ছেন জাপানের রাজকুমারি মাকো এবং তার বাগদত্ত প্রেমিক কিই কোমুরো।

বিয়ের পর দু’জনই যুক্তরাষ্ট্রে সংসার পাতবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে আইনপেশায় যুক্ত আছেন কিই কোমুরো।

জাপানের আইন ও দেশটির রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, পরিবারের কোনো নারী যদি সাধারণ ঘরের কাউকে বিয়ে করেন, সেক্ষেত্রে তাকে রাজকীয় পদ-পদবি ও মর্যাদা ছাড়তে হয়। তবে রাজপরিবারের পুরুষদের ক্ষেত্রে এই আইন কার্যকর হয় না।

মেয়েদের বিয়ের পর প্রাসাদ ত্যাগের সময় উপহার হিসেবে তাদেরকে অর্থ দেওয়ার রীতিও চালু আছে জাপানের রাজপরিবারে। সেই অনুযায়ী, বিয়ের পর রাজপরিবার থেকে মাকোর পাওয়ার কথা ১০ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

কিন্তু রাজকুমারী জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো অর্থ নেবেন না তিনি। রাজপরিবারের মেয়েদের বিয়েতে যেসব আচার-অনুষ্ঠান হয়, সেগুলোও তিনি বর্জন করতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০১২ সালে টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কোমুরোর সঙ্গে পরিচয় হয় মাকোর, তা থেকে প্রেম। ২০১৭ সালে তারা আংটি বদল করেন এবং তার পরের বছর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু ২০১৮ সালে বিয়ে হয়নি তাদের। তার প্রধান কারণ- কোমুরোর পরিবারের আকস্মিক আর্থিক সংকট। এদিকে, কোমুরোর পরিবারের আর্থিক সংকট ও রাজপরিবারের এই ঘটনা নিয়ে জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলোর অতি আগ্রহের কারণে তীব্র মানসিক চাপজনিত সমস্যা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হন মাকো।

জাপানের রাজপরিবারে অবশ্য রাজকুমারি মাকোই প্রথম নন, যিনি এ ধরণের মানসিক সমস্যায় পড়েছিলেন। তার এক ফুপু, প্রিন্সেস মাসাকোও এই মানসিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেছেন। পুত্র সন্তান জন্ম দিতে পারছেন না- এজন্য পরিবারের সদস্যদর দ্বারা মানসিক চাপের শিকার হয়েছিলেন মাসাকো।

জাপানের পত্রপত্রিকাগুলো প্রচার করছিল, কোমুরোর আর্থিক সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে এবং ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য কোমুরোর মা তার সাবেক প্রেমিকের কাছ থেকে অর্থ ধার করেছেন।

পরে অবশ্য পরে জাপানের রাজপ্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানায়, বিয়ে পেছানোর সঙ্গে কুমুরোর মায়ের অর্থনৈতিক সংকটের কোনো যোগসূত্র নেই।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, রাজকুমারী মাকো হতে যাচ্ছেন হতে যাচ্ছেন জাপানের রাজপরিবারের ইতিহাসের প্রথম নারী সদস্য যিনি প্রথা ভেঙে একজন সাধারণ মানুষকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন