গুড় শরীরের জন্য বেশ উপকারি

গুড় শরীরের জন্য বেশ উপকারি

শীতকাল মানেই খেজুরের রস। আর খেজুরের রস মানেই যশোর। কথায় আছে, ‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’। ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে সেই রস সংগ্রহে বেড়িয়ে যান গাছি। কুয়াশায় সব কিছুই ঝাপসা। এরই মাঝে তরতর করে উঠে যান গাছে। চৌদ্দ পুরুষের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিপুনভাবে রসে ভরা হাড়ি নামিয়ে নিয়ে আসেন গাছ থেকে। এমনই কয়েকটি হাড়িভর্তি রস নিয়ে বাড়ি ফেরেন সে। ততক্ষনে কেবল সূর্যমামা আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠে। এরপর সেই রস জ্বাল দিয়ে বানানো হয় গুড়।

 

ভৌগলিক অবস্থানের জন্য যশোর জেলায় শীতকালে প্রচন্ড শীত পড়ে অন্যদিকে আবহাওয়া থাকে বেশ শুষ্ক।
আর তাই যশোরের খেজুরে রস দিয়ে বানানো গুড় স্বাদের দিক দিয়ে বাংলাদেশের যেকোনো অঞ্চলের খেজুর গুড়ের চেয়ে সেরা।

শরীরে আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হয়। ফলে নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হয় শরীরে।
গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে গুড় খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি কমতে পারে।
এই শীতে জমিয়ে নলেন গুড় খান। পায়েস, পিঠে, পুলি তো রান্না হবেই। তার মধ্যেই থাকবে নলেন গুড়। গুড়ের পায়েস আমাদের তো খুব প্রিয়। আপনি যদি ডিনারের সময় সামান্য গুড় ভেঙে খান, তাহলে মন্দ হয় না। একচামচ দুধ-ভাতের সাথে খেতে পারেন গুড়। এছাড়া রুটির সঙ্গে অল্প গুড় মাখিয়ে খাওয়ার কথা আর কে ভুলতে পারে। সব মিলিয়ে শীতের খাবারের তালিকায় গুড় একটা দারুণ খাবার।
গুড় দিয়ে বানাতে পারেন নানা খাবার- 

দুধপুলি পিঠা:
কড়াইতে পানি দিন। পানি ভাল মত ফুটে লবন ও চালের গুড়া দিয়ে ভাল করে নাড়ুন। নামিয়ে গরম অবস্থায় হাতে একটু পানি লাগিয়ে খামির তৈরি করুন। ২ লিটার দুধ কে জ্বাল দিয়ে ১ লিটার করুন। এখন ক্ষীরের মধ্যে নারিকেল কুচি, এলাচ, লবঙ্গ দিয়ে নাড়ুন। খামির তৈরি হলে ঠান্ডা হতে দিন। ছোট ছোট গোল করে ভিতরে পুর দিয়ে পুলি বানান। ফুটন্ত পানির হাঁড়ির মুখে বাঁশের চালুনির উপর পুলি রেখে ভাপে সিদ্ধ করতে হবে। রাইসকুকারের স্টিমার দিয়েও করতে পারেন। সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে দিন। ক্ষীরের মধ্যে পুলি পিঠা গুলো দিয়ে কিছুক্ষন জ্বাল দিন। নামিয়ে ঠাণ্ডা হলে পরিবেশন করুন।
নলেনগুড়ের পায়েস:
প্রয়োজন মত তরল দুধ নিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। দুধ ফুটে উঠলে স্বাদ বাড়াতে গুড়ো দুধ ব্যবহার করতে পারেন। কিছু এলাচ, দারচিনি দিয়ে দিন। এবার আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা পোলাও এর চাল দিয়ে দিন। যখন দেখবেন দুধ অর্ধেক হয়ে যাবে আর চালও সেদ্ধ হয়ে গেছে; তখন কাজুবাদাম কুচি দিয়ে নেড়ে আরেকটু ঘন করে চুলা বন্ধ করে দিন। এবার নলেন গুড় পায়েসের মধ্যে মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে দিন। আবারো চুলা জ্বালিয়ে দুই মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে পায়েস। নামিয়ে সার্ভিং বলে ঢেলে উপরে ছিটিয়ে দিন কিসমিস, পেস্তা ও কাজুবাদাম কুচি। তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু নলেন গুড়ের পায়েস।
গুড়ের মোয়া:
গুড় একটা কড়াইতে জ্বাল দিয়ে গরম করে নিন। এরপর এতে প্রয়োজন মত মুড়ি দিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করুন। মুড়ি এবং গুড় মিশিয়ে একটা আঠালো ভাব আনতে হবে। এবার নামিয়ে নিন। হালকা গরম থাকতেই হাতের তালুতে সামান্য ঘি মেখে ভালোভাবে চেপে হাতের তালুতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মোয়া বানিয়ে নিন। খাঁটি গুড়ে মোয়া বানানো একদমই সহজ। কেননা এতে কোন চিনি কিংবা হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হয়না। তাই গরম করা মাত্রই এতে আঠালো ভাব চলে আসে।

আপনি আরও পড়তে পারেন