মাছ শূন্য রূপগঞ্জের বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী

মাছ শূন্য রূপগঞ্জের বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ

রূপগঞ্জের দু;টি নদী। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী। দুটি নদীরই আজ করুন দশা। দখলে দুষণে নিৎস্ব এ দুটি নদী। রাজধানী ঢাকার যাবতীয় ময়লা আর্বজনা এ নদীর পানিতে ফেলে পানিকে বিষাক্ত করে ফেলেছে। পানি নষ্ট হয়ে এতটাই কালচে বর্ণ ধারন করেছে যে একে আর পানি বলা যায় না। স্থানীয় লোকেরা একে পঁচা বলে। একসময় এই নদীতে জেলের জালে পড়ত পুঁটি, টেংরা, বোয়াল, রুই, কৈ, শিং, মাগুর, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, শোল, আইড়, চেই, ডংকু বাইলা, টাকীসহ নানান জাতের দেশীয় মাছ।
আর এসকল মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত জেলেরা। তবে বালু ও শীতলক্ষ্যায় আগের মতন নানান জাতের দেশীয় মাছের দেখা নেই বহুদিন ধরে। এখন আর আগের মতন নদীতে জাল ফেলতে দেখা যায় না জেলেদের। নদীতে জাল ফেললেও মাছের দেখা নেই। বর্ষায় নদীতে পানি বেশি থাকায় কয়েকজন জেলেকে মাছ শিকারে দেখা গেলেও শীতকালে তাদের দেখা মিলে না। কারণ শীতকালে নদীর পানি কমে যায় আর দূষণের মাত্রা বেশি থাকে যার কারনে পানি নষ্ট হয়ে যায়।
প্রায় ৪০ বছর ধরে বালু নদে মাছ শিকার করে সংসার চালান জেলে নিতাই রায় (৫৭)। একান্ত আলাপকালে তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই আমার বাবার সাথে নদীতে মাছ ধরি। বালু ও শীতলক্ষ্যায় এখন আর আগের মতন মাছ নেই। জালে মাছ উঠছে না। এতে আমরা জেলেরা নিরুপায় হয়ে যাচ্ছি। মাছ ধরে সংসার ঠিক মতো চালাতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যোগদান করে আয় করছেন।
অনেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন পৈতৃক পেশা ছেড়ে দেবেন। নদীতে কমে এসেছে জেলের সংখ্যা। বালু ও শীতলক্ষ্যায় মাছ ধরে সারাবছর সংসার চালানো এই জেলে আরও বলেন, একসময় দৈনিক যা মাছ ধরতাম তা বিক্রি করে সংসার তো চালাইতামই পাশাপাশি ভালোভাবে জীবনের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতাম। আর এখন যা মাছ পাই তা দিয়া সংসার চালানোই কষ্টকর, বাড়তি চাহিদার কথা নাই বা বললাম। তাই অনেক কষ্টে আমাদের দিন চলছে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ইমরান হোসেন জানান,রাজধানী ঢাকার ময়লাসহ বিভিন্ন কল-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। এই বিষাক্ত কেমিক্যাল পানির সাথে মিশে পানি দূষিত হওয়ার কারণে নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। যার ফলে আগের তুলনায় বর্তমানে জেলেরা মাছ পাচ্ছে না। নদীতে দেশীয় মাছ কম থাকায় আমাদের পক্ষ থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ অবমুক্ত করা হয়। সেই মাছ বড় হয়ে বর্ষাকালে নদীতে যায়। বর্তমানে সেগুলোই জেলেরা ধরেছে।
এদিকে দিন দিন পেশাদার জেলের সংখ্যা কমে আসছে। জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছের পোনা শিকার করার কারণে নদ-নদীতে মাছের বৃদ্ধি হয় না। তাদেরকে সচেতন করা হচ্ছে বলেও জানান এই সরকারি কর্মকর্তা।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন