সহকর্মীর নামে বসকে কিছু বলা কি গুনাহের কাজ?

সহকর্মীর নামে বসকে কিছু বলা কি গুনাহের কাজ?

অফিসের কর্মচারীরা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা এটা জানার জন্য অফিসের পক্ষ থেকে যদি কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যে, সে তার সহকর্মীদের বিষয়ে বসকে গিয়ে রিপোর্ট দেবে, তাহলে কি এই দায়িত্ব পালন ওই কর্মচারীর জন্য গুনাহ হবে নাকি অফিসের পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব হিসেবে গণ্য হবে?

ইসলাম কর্মক্ষমদের কাজে উদাসীনতা, অবহেলা ও নির্লিপ্ততা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন—  ‘সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম কর্মী, যে শক্তিমান ও দায়িত্বশীল। ‘ (সুরা কাসাস, আয়াত : ২৬)

ইসলামে দায়িত্বশীলতা ও আমানত পূর্ণাঙ্গভাবে রক্ষা করা প্রত্যেকের জন্য ফরজ। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি হতে হবে। কর্মীর কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ কাজ বুঝে না পেলে পরকালে অপরাধী হিসেবে শাস্তি পেতে হবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যককে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৪৪; তিরমিজি, হাদিস: ১২৪)

এছাড়া ইসলামে অফিস কর্মীদের কাজের তদারকির করা দোষণীয় নয়। তাদের কাজের ভুল-ত্রুটির বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখাও দোষের কিছু নয়। তবে কেউ যদি ব্যক্তিগত কোনো কাজ গোপন রাখতে চায় তাহলে সে বিষয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করা যাবে না। কারণ ইসলামে এমন করা নিষেধ।

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,  ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোনো কোনো অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে, বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। -( সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)

এই আয়াতে পারস্পরিক হক ও সামাজিক রীতি-নীতি ব্যক্ত হয়েছে এবং এতে তিনটি বিষয় হারাম করা হয়েছে। (এক) ধারণা, (দুই) কোন গোপন দোষ সন্ধান করা এবং (তিন) গীবত অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে শুনলে অসহনীয় মনে করত।

যেসব মুসলিম বাহ্যিক অবস্থার দিক দিয়ে সৎকর্মপরায়ণ দৃষ্টিগোচর হয়, তাদের সম্পর্কে প্রমাণ ব্যতিরেকে কু-ধারণা পোষণ করা হারাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, ধারণা মিথ্যা কথার নামান্তর।’(বুখারী: ৪০৬৬, মুসলিম: ২৫৬৩)

আয়াতে কারো দোষ সন্ধান করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ, এর দ্বারা নানা রকম ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়।

আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা (কারো প্রতি খারাপ) ধারণা করা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ ধারণাভিত্তিক কথা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা একে অপরের দোষ তালাশ করো না আর তোমরা পরস্পর পরস্পরের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষও পোষণ করো না এবং পরস্পর শত্রুতা ও দুশমনি পোষণ করো না। বরং হে আল্লাহর বান্দারা! (তোমরা পরস্পর) ভাই ভাই হয়ে থাক। যেভাবে তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ‘ (বুখারি : ৫১৪৪)

 

আপনি আরও পড়তে পারেন