সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা,প্রতিবাদে মানববন্ধন 

সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা,প্রতিবাদে মানববন্ধন 
সাধন রায় লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ

লালমনিরহাটে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রামে চার সাংবাদিক এবং হাতিবান্ধায় এক সাংবাদিকদের উপর গত (১২ আগস্ট) হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।

বাংলাদেশ প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের আয়োজনে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকাল ১১ টায় জেলা শহরের মিশনমোড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে গত শনিবার (১৩ আগস্ট) জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের আয়োজনে দুপুরে একই স্থানে এবং জেলার কালীগঞ্জ ও হাতিবান্ধা উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লালমনিরহাটে সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা জানান, দেশ তথা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সমাজের উন্নয়ন, অবনতি, অসংগতি কলমের মাধ্যমে তুলে ধরাই সাংবাদিকদের প্রধান কাজ। এতে সমাজের সামজিক অবক্ষয়ের মাত্রা কমে আসা সহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে সংবাদকর্মীরা। এসময় বক্তারা বলেন, অপরাধীদের কোনো দল হয় না, শুধু অপরাধকে লুকাতে দলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তাই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে লালমনিরহাটের সাংবাদিরা বর্বর হামলার শিকার হয়েছে সে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা বলেন, সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতির ছেলে দুই সন্তানের জনক হয়েও অন্য একজন নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে করে, এ বিষয়ে সভাপতির প্রথম পুত্রবধু আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলো। এছাড়া স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার সুবাদে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজার রহমান মন্ডল তার দুই ছেলেকে ঐ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী ও পিয়ন পদে চাকুরি দিয়েছে। তাছাড়া তার নিকট আত্মীয় স্বজনদের মাঝে সরকারী সকল সুবিধা প্রদান করার বিষয়গুলো অত্র এলাকায় চাউর হলে চার সংবাদকর্মী তথ্য সংগ্রহে যায়। তথ্য সংগ্রহ করে ফেরার সময় ঐ পরিবারের অংশগ্রহণসহ একদল সন্ত্রাসী সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়, এতে প্রথম আলোর আব্দুর রব সুজন, যমুনা টিভির প্রতিনিধি আনিসুর রহমান লাডলা, এখন টিভির বকুল, ক্যামেরাম্যান আহসান আহত হয়। হামলাকারীরা তথ্য নিতে যাওয়া সকল সাংবাদিকদের প্রাণে মারা এবং আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

এছাড়া মানববন্ধন অংশ নেওয়া বক্তারা জানান, হামলার ঘটনায় রাতেই সদর থানায় আনিসুর রহমান লাডলা বাদি হয়ে একটি লিখিত ও দিয়েছে। এ ঘটনার ২৪ ঘন্টা পর একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার চারদিন অতিবাহিত হলেও বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। অতি দ্রুত বাকী আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানান বক্তারা।

বাংলাদেশ প্রেসক্লাব লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি এস. আর শরিফুল ইসলাম রতনের সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে জেলায় কর্মরত সকল সাংবাদিকবৃন্দের বিভিন্ন সংগঠন, প্রেসক্লাব লালমনিরহাট, জাতীয় সাংবাদিক ঐক্য ফোরামসহ অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করে সাংবাদিকদের উপর হামলায় অংশ নেওয়া সকলকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে।

এসময় সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদুর রহমান মুকুল, জনকণ্ঠের জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, ৭১টিভির উত্তম রায়, চ্যানেল২৪ এর মিলন পাটোয়ারী, বাংলাদেশের খবর পত্রিকা এসকে সাহেদ, বাংলাদেশ প্রেসক্লাবে লালমনিরহাটের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল বাদশা, যুগ্ম সাঃ সম্পাদক বাবু, প্রচার সম্পাদক ও আলোর পত্রিকার সম্পাদক মাসুদ রানা রাসেদ, কোষাধ্যক্ষ এবং আলোর মনির নির্বাহী সম্পাদক হেলাল কবির, কাওসার মাহমুদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। এসময় সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ প্রায় দেড় শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণী পেশা মানুষ অংশ নেয়।

প্রসঙ্গত, গত ১২ আগস্ট বিকেলে লালমনিরহাট কর্মরত প্রথম আলোর প্রতিনিধি আব্দুর রব সুজন, যমুনা টিভির আনিসুর রহমান লাডলা, এখন টিভির বকুল এবং ক্যামেরা পার্সন আহসান পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির আজিজার রহমান মন্ডলের পরিবার এবং ২০-২১জনের একটি সন্ত্রাসী দল হামলা চালিয়ে ক্যামেরা, মোবাইল, ক্যামেরা স্টান্ড ছিনিয়ে নেয় এবং ছিনিয়ে নেওয়া স্টান্ড দিয়েই হামলা করে সবাইকে আহত করে। আহত আনিসুর রহমান লাডলা বর্তমানে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আর বাকিরা আংশিক সুস্থ হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ছাড়পত্র দিয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন