গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ভূয়া ও বহিস্কৃত শিক্ষক কাজী সাখাওয়াতের জাল-জালিয়াতী ও হয়রানীমূলক একাধীক মামলায় ২২ শিক্ষক কর্মচারীরজীবন-জীবিকা হুমকীর মূখেঃ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ভূয়া ও বহিস্কৃত শিক্ষক কাজী সাখাওয়াতের জাল-জালিয়াতী ও হয়রানীমূলক একাধীক মামলায় ২২ শিক্ষক কর্মচারীরজীবন-জীবিকা হুমকীর মূখেঃ
     সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ভূয়া কাগজপত্র সৃষ্টির মূলহোতা,ব্যাপক,অনিয়ম,দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতির কারণে আরবী প্রভাষক মাওলানা মোঃ সাখাওয়াত হোসেন চাকুরীচ্যুত হয়।কিন্তু তা সত্বেও মাদ্রাসায় তার হয়রানী ও মিথ্যা মামলায় বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কর্যক্রম ও ২২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর জীবন-জীবিকা ।
   একাধীক সূত্রে জানা যায় পুলিশ হত্যা মামলাসহ দুই ডজনেরও বেশি নাশকতার মামলার আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে অফিস আদালত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কাজী সাখাওয়াত। সাখাওয়াত হোসেন উপজেলার ভুরারঘাট এম.ইউ বহুমূখী ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার ভূয়া আরবী প্রভাষক ও অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) ছিলেন।
      শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বিপিএড’র জাল সনদ সৃষ্টি করে ২০০০ সালে উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের আজেপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় শরীরর্চচা শিক্ষক হিসেবে এমপিও ভূক্ত হন। এরপর ২০০৩ সালে  কোনো দক্ষতা ও অভিঙ্গতা না থাকলেও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করে ওই মাদ্রাসায় সুপার হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে নিয়োগ বানিজ্যসহ শিক্ষক-র্কমচারীদের বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার -নির্যাতন ও হয়রানি করিয়া তাদের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন  ও নিরিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে প্রমাণিত হলে ধূর্ত মোঃ সাখাওয়াত হোসেন কিছু অসাধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার যোগসাজশে তা ধামাচাপা দেন।
    আসন্ন বিপদ বুঝতে পেরে আবারো জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র সৃজন করে ভূরারঘাট এম.ইউ বহুমূখী ফাযিল(ডিগ্রি) মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে গর্ভনিং বডির সভাপতি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সকল সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে একদল কুচক্রি লোকের যোগসাজসে ২০০৪ সালে আরবী প্রভাষক পদে অত্র মাদরাসায় ২য় বারের মতো এমপিও ভূক্ত হয়।
    বিষয়টি জানা জানি হলে গর্ভনিং বডির সভাপতি উপজেলা র্নিবাহী কর্মকর্তা গর্ভনিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উক্ত সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত, গাইবান্ধায় মামলা দায়ের করার জন্য অধ্যক্ষ সাহেবকে ক্ষমতা প্রদান করায় তিনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন । অপরদিকে ধুরন্ধর সাখাওয়াতও উক্ত আদালতে একটি কাউন্টার মামলা দায়ের করেন এবং নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি করে মামলাটি তুলে নেন এবং ভূরারঘাট মাদরাসায় নিয়োগ থাকা অবস্থায় আজেপাড়া দাখিল মাদরাসায়ও বিল বেতন উত্তোলন করিতে থাকেন।
    পরর্বতীতে সাখাওয়াত হোসেন গোপনে তার শ্বশুর ও স্ত্রীর বড় ভাইসহ বাড়ীর কাজের লোকদের দ্বারা কমিটি গঠন করে ভুরারঘাট এম.ইউ বহুমুখী ফাযিল(ডিগ্রি) মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ মোঃ আজিজুর রহমানকে অবৈধ পন্থায় অপসারণ করেন। সেই সাথে জুনিয়র শিক্ষক মোঃ মকবুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে এনে কৌশলে আবারো কাগজপত্র সৃজন করে ২০০৯ সালে উক্ত মাদ্রাসায় নতুন একটি ইনডেক্স ব্যবহার করে আরবী প্রভাষক হিসেবে তৃতীয়বারের মতো নিয়োগ দেখিয়ে নিজে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং শিক্ষক কর্মচারিদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাতে থাকেন।
  কাগজপত্র দৃষ্টে দেখা যায় কাজী সাখাওয়াত হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে পুনরায় জুনিয়র শিক্ষক মকবুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে নিজেকে ৪র্থ বারের মতো ভূয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে ভূরারঘাট মাদরাসায় আবারো ২০১১ সালে উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেখান।শিক্ষিত মহলের প্রশ্ন দক্ষতা,যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই কিভাবে শরীরচর্চা শিক্ষক থেকে সুপার বা প্রভাষক থেকে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেওয়া সম্ভব।
   আরো জানা যায়, সাখাওয়াত হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে উক্ত মাদ্রাসার ০৪ জন জীবন্ত শিক্ষককে মৃত্যু ও তাদের নামে ইস্তফা পত্র দেখিয়ে এমপিও থেকে নাম কর্তন করে তাদের স্থানে জালিয়াত সাখাওয়াত নিজের স্ত্রী, শ্যালকের স্ত্রী, বোনের মেয়ে ও নিকট আত্মীয়কে নিয়োগ দেখিয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজেসে এমপিও ভূক্ত করে সরকারী কোষাগারের কোটি টাকার উপরে আত্মসাত করেন। উল্লেখিত র্কমকান্ডের কারণে অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক গাইবান্ধা, স্থানীয় সরকারের উপ সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব এবং মাউশির উপপরিচালক সরেজমিন তদন্তে জাল-জালিয়াতি ও অনিয়ম দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাত এর বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলেও অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতাবলে সাখাওয়াত হোসেন বহাল তবিয়তে চাকুরীসহ অন্যায় কাজ কর্ম করেই যান।
  তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সাখাওয়াত হোসেনসহ অবৈধ ভাবে এমপিওভূক্ত ৫ জন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত হলে তিনি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করে এমপিও ছাড় করণের চেষ্টাকালে হাতেনাতে ধরা পরার পর কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের উপ সচিব কবির আল আসাদের সরেজমিন তদন্তে জাল স্বাক্ষর বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় সাখাওয়াত হোসেন সহ ৫জন শিক্ষকের এমপিও পুনরায় স্থগিত হয়। এরপরে জালিয়াত সাখাওয়াত হোসেন স্থগিতকৃত এমপিও ছাড় করণের জন্য মহামান্য হাইর্কোটে রিট পিটিশন নং-৮৮০২/১৮ আনায়ন করেন। র্দীঘ শুনানি শেষে গত ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ তারিখের আদেশে তিনি হেরে গেলে লিভ টুআপিল নং ১১১/২১ দায়ের করলে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে তা খারিজ হয়ে যায়।
   মামলার নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পত্রাদেশের আলোকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কারণ দর্শানোর যথাযথ জবাব না পাওয়ায় এবং মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে বিধি অনুযায়ী বর্নিত ৫ জন শিক্ষকের নাম এমপিও থেকে স্থায়ীভাবে কর্তন করেন ।
   সাখাওয়াত হোসেন চাকুরীচ্যুত হওয়ার পরেও অফিস আদালতে কখনো নিজেকে প্রভাষক, কখনো উপাধ্যক্ষ ও কখনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মাদ্রাসা সীল প্যাড ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভূয়া আবেদন করে। কখনো নিজে বাদী হয়ে কখনো স্ত্রী বা ভাগ্নীকে দিয়ে অথবা কাজের লোক দিয়ে মামলা মোকদ্দমা করে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতিসহ হয়রানি করেই চলছেন।
  এধরণের কর্মকান্ডের জন্য অত্র মাদ্রাসায় গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ হলেও কমিটি গঠন করতে না পারায় গত ঈদ উৎসব ভাতা ও এপ্রিল/২২ মাস থেকে অদ্যবধি বেতন ভাতা পাচ্ছেন না শিক্ষক র্কমচারীরা। যার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে মাদ্রাসার শিক্ষাদান কর্মসূচীসহ সার্বিক কার্যক্রম। বর্তমানে সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে সি.আই.ডি ঢাকা ও দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী মামলা বিচারাধীন।
   এছাড়াও সুন্দরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, সুন্দরগঞ্জে ৪ পুলিশ হত্যাসহ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ২০/২৫টি মামলার আসামী সাখাওয়াত হোসেন । বর্তমানে মামলাগুলি আদালতে বিচারাধীন।
    আরো জানা যায়, একদিকে সাখাওয়াত হোসেন নিজেকে শিক্ষক দাবী করে আসলেও অপরদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একাধিক প্রতিষ্ঠানে অবৈধ পন্থায় সভাপতি হয়ে জীবন্ত শিক্ষককে মৃত দেখিয়ে তদস্থলে অন্য ব্যাক্তিকে এমপিও ভূক্ত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
   অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সাখাওয়াত হোসেন সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার একজন নিকাহ রেজিষ্ট্রার। সেখানেও নির্বিঘ্নে বাল্য বিবাহসহ সকল ধরনের অনিয়ম বিশেয করে বরপক্ষকে দেনমোহর কমানোর এবং কনেপক্ষকে দেনমোহর বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।বিষয়টি হাতে-নাতে  ধরাপড়ায় বিজ্ঞ আদালত স্ব-প্রণোদিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
     ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের  সরেজমিন তদন্ভে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে বিবাহ রেজিষ্ট্রারের সনদ বাতিল হলেও অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতাবলে বহাল তবিয়তে কাজ চালিয়ে অনিয়ম করেই যাচ্ছেন কাজী সাখাওয়াত।এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান ।
     কিন্তু তারপরেও থেমে নেই সাখাওয়াত হোসেন। চাকুরী ফেরত পাওয়ার নাটক করে তথ্য গোপন পূর্বক জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র সৃষ্টি করে মহামান্য হাইর্কোটে ও বিজ্ঞ আদালত গাইবান্ধায় কমপক্ষে১৫-২০ টি মামলা করে মাদ্রাসাটিকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে উপনীত করেছে।সচেতন মহলের প্রশ্ন –দেশের প্রচলিত আইনে এর সমাধান কি হবে না? আরো কতদিন চলবে এই জালিয়াত সাখাওয়াতের দেশ বিরোধী কর্মকান্ড ?

আপনি আরও পড়তে পারেন