যৌতুকের জন্য নির্যাতন ৯৫ ভাগ থাকে অমীমাংসিত

যৌতুকের জন্য নির্যাতন ৯৫ ভাগ থাকে অমীমাংসিত

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃরূপগঞ্জে প্রতি বছর গড়ে নিহত ২৫০ গৃহবধূ। যৌতুকের অভিশাপে কপাল পুড়েছে আরিফা, স্বপ্না, গুল আক্তার, সুরাইয়া, মাফিয়া, আসমা বেগমসহ রূপগঞ্জের দুই শতাধিক গৃহবধূর। তাদের সংসার নামক স্বপ্ন যৌতুকের কারণেই পূরণ হয়নি। আবার কেউ কেউ সন্তানের কথা চিন্তু করে নির্যাতনের মুখে সব সহ্য করছে। কেউ কেউ স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবা-ভাইদের কাছে ফিরে কাজ করছে বিভিন্ন গার্মেন্ট, কলকারখানা আর বাসাবাড়িতে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপগঞ্জে যৌতুকের জন্য গত পাঁচ দশকে নিহত হয়েছেন ২৫০ জন গৃহবধূ। গত ১০ বছরে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় ৯ শতাধিক জিডি হয়েছে। আর আদালতে ২ শতাধিক মামলা হয়েছে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ৩০ নারী। শতাধিক গৃহবধূকে ছাড়তে হয়েছে স্বামীর সংসার। স্বামী, শাশুড়ী আর দেবরের নির্যাতনে কমপক্ষে ৫০ জন গৃহবধূ এখন পঙ্গু।
নির্যাতিত অনেকের অভিযোগ, যৌতুক বন্ধে কার্যত পুলিশের কোন ভূমিকা নেই। নির্যাতিত কেউ থানায় আশ্রয় নিলে পুলিশ জিডি করার পরামর্শ দিয়ে বিদায় করে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ বিবাদীর (পুরুষ ) পক্ষ নেয়। পুলিশ বিবাদীর কাছ থেকে ‘বিশেষ’ সুবিধা পেয়ে নয়-ছয় করে।
সরেজমিনে থানা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পাড়া-মহল্লায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক অসহায় মা-বাবা যৌতুকের টাকা দেওয়ার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি ও বিত্তশালীদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরে মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে আর্থিক অভাবের কারণে থানায় মামলা না করে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সমাজপতিদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরেন। এর দু’য়েকটির সমাধান হলেও ৯৫ ভাগ থেকে যায় অমীমাংসিত।
যৌতুকবিরোধী সেøাগানের ফেরিওয়ালা রূপগঞ্জের নগরপাড়া এলাকার রায়হানা সুলতানা কণা। তিনি একাই ২০০৫ সাল থেকে যৌতুকবিরোধী লিফলেট, দেয়াল লিখনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। রায়হানা বলেন, যৌতুক সমাজের একটি মারাত্মক রোগ। আসলে শাস্তির চেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রচার-প্রচারণা ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির। সমাজকর্মী লায়ন আলহাজ মোজাম্মেল হক ভূইয়া বলেন, যৌতুক সমাজের অভিশাপ। যৌতুকের বিরুদ্ধে সবার সোচ্চার হতে হবে।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন