রূপগঞ্জে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা লাখো মানুষ ভোগান্তিতে

রূপগঞ্জে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা লাখো মানুষ ভোগান্তিতে

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ

 

নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নেই সোয়ারেজের লাইন। সামান্য বৃষ্টিতেই জমে যায় হাটু পানি। মানুষের চলাচলে মনে হয় নদীর চলে ঢেউ খেলে। ১ দিনের জমা পানি সরতে সময় লাগে ৭ দিন। এতে করে যেমন ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি স্থানীয় জনগন রয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও হাটবাজারে পানি ঢুকে লাখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। বসতবাড়ি, হাটবাজার, দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। রাস্তায় জমেছে হাঁটুপানি। এমনকি বন্যা-পরিস্থিতির উপক্রম হয়েছে কিছু এলাকায়।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল হাসান তুহিন  জানান, তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ৫ নম্বর ক্যানেল ও নতুন বাজার এলাকায়। এখানে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাস করে। জলাবদ্ধতা ঠেকাতে তারা খালগুলো পরিষ্কার করছেন। পরিষ্কার না করলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেবে। এ ছাড়া বাঁধের ভেতরে নিচু এলাকাগুলোয় উঁচু এলাকার পানি এসে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।
অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল ও বাড়িঘর নির্মাণ করাই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। পানি নিষ্কাশনে যাত্রামুড়া ও বানিয়াদির পাম্প হাউসগুলো কোনো কাজে আসছে না বলেও তাদের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, সুতালড়া, আড়িয়াব, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, যাত্রামুড়া, গোলাকান্দাইল, বিজয়নগর, বলাইখা, উত্তরপাড়া, মিয়াবাড়ি, নামাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, ৫ নম্বর ক্যানেল, রূপসী, গন্ধর্বপুরসহ বেশ কয়েকটি নিচু এলাকায় প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ এবং ১৯৯৩ সালে শতকোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের ভেতরে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনদুর্ভোগ।
দুই দিনের বৃষ্টিতে দুটি সেচ প্রকল্প এলাকার কোথাও জমেছে হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা গড়ে উঠে অগ্রণী সেচ প্রকল্প এলাকা পরিণত হয়েছে আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। বসতি আর কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলাবদ্ধতাও। বর্তমানে সেচ প্রকল্প দুটির কৃষিজমিতে পানি সেচের তেমন ব্যবস্থা নেই। এসব কৃষিজমিতে ঘরবাড়ি ও শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এখন প্রকল্প দুটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দ্রুত করা দরকার। অগ্রণী সেচ প্রকল্পের যাত্রামুড়া পাম্প হাউস থেকে বরপা সেতু হয়ে একটি মূল খাল সেচ প্রকল্পের বানিয়াদী এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে সংযুক্ত হয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে প্রভাবশালীরা খালগুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি সরাসরি ফেলা হয় বলে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে দুটি প্রকল্প এলাকার জনগণের পিছু ছাড়ছে না জলাবদ্ধতা।
একাত ব্লাড ফাউন্ডেশন ও সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি মহসিনুল হক বলেন, বৃষ্টির কারণে গোলাকান্দাইল নতুন বাজার সড়ক ডুবে গেছে হাঁটুপানিতে। পানি ভেঙে এখানকার মানুষ চলাফেরা করছে। অনেকে বৃষ্টির কারণে দোকানপাট খুলতে পারছে না। প্রশাসনের কাছে দ্রুত পানি সরানোর দাবি জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল হক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার ও অগ্রণী সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন