নরসিংদীতে সম্মেলনে মিটবে কি আ. লীগের দীর্ঘদিনের কোন্দল?

নরসিংদীতে সম্মেলনে মিটবে কি আ. লীগের দীর্ঘদিনের কোন্দল?

সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি:

দীর্ঘ ৭ বছর পর আগামীকাল শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন।
এ সম্মেলনকে ঘিরে মুখোমুখি অবস্থানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত জেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ।
উত্তেজনার সম্মেলনে শীর্ষ দুই পদের জন্য লড়ছেন এক ডজনের বেশি নেতা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নানামুখী তৎপরতাসহ লবিং তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা।
এদিকে সম্মেলন সফল করতে জেলা স্টেডিয়ামসহ পুরো শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের অভ্যর্থনা জানাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর অংশে ১৬৩টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী আওয়ামী লীগ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। যার শুর ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জেলার সভাপতি মোহাম্মদ নজরল ইসলাম হীরর সঙ্গে বিরোধে জড়ান নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র কামরজ্জামান কামরল। আর সেই আগুনে ঘি ঢালেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঞা। ভাগ হয়ে যান অন্যা নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রের সর্তকতার পরও উল্টো বাড়তে থাকতে বিরোধ। একাধিকবার সর্তক করার পরও নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় ব্যর্থ হওয়ায় ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর জেলার শীর্ষ দুই নেতাকে অব্যাহতি দিয়ে ভারপ্রাপ্তদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবুও ফেরেনি ঐক্য, কোন্দলের হাওয়া জেলা থেকে পৌঁছে উপজেলা পর্যায়েও। চলে পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ ও আলাদা দলীয় কর্মসূচি পালন। কোন্দলের এই জোয়ারে বেশ কয়েকজন প্রবীণ ও নবীন নেতা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হারিয়েছেন দলীয় পদ। শুধু তাই নয়, ফেসবুকেও এক পক্ষের সমর্থকরা আরেক পক্ষের নেতাদের নামে ছড়াচ্ছেন কুৎসা।
সম্প্রতি সম্মেলনকে সামনে রেখে বিরোধের পালে হাওয়া লাগে। নজরল ইসলাম হীরকে সমর্থন দেন সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশ। অপরদিকে কামরজ্জামান কামরলকে সমর্থন দিচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী নুরল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি, নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারল আশরাফ খাঁন দিলীপ, নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য জহিরল হক ভূঁইয়া মোহন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলীসহ আওয়ামী লীগের অপর একটি অংশ।
এদিকে শীর্ষ দুই পদের জন্য লড়ছেন এক ডজনেরও বেশি নেতা। সভাপতি পদে চলছে বর্তমান ও সাবেকের লড়াই। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব চাচ্ছেন ভারমুক্ত হতে। আর সাবেক সভাপতি সদরের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরল ইসলাম হীর চাচ্ছেন পুরোনো পদ ফিরে ফেতে। লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য জহিরল হক ভূঁইয়া মোহন ও নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরল আশরাফ খাঁন পোটন।

সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারন অর রশিদ, কার্য নির্বাহী সদস্য মঞ্জুরল মজিদ মাহমুদ সাদী, নরসিংদী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরজ্জামান কামরল, সাবেক সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকার, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরল ইসলাম ভূঁইয়া, নরসিংদী জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল ইসলাম।
নবীণ ও প্রবীণের এই লড়াইয়ে প্রত্যেকেই দলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সাধারণ সম্পাদক ঘোষণায় নেত্রী চমক দিতে পারেন।
এদিকে সম্মেলনকে নিয়ে উত্তাপ ছড়ায় গত ৭ সেপ্টেম্বর রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশে সাবেক মন্ত্রী নরসিংদী-৫ আসনের সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর বক্তব্য। তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ভুল সিদ্ধান্ত দিলে, কেউ নরসিংদী থেকে ফিরে যেতে পারবেন না।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ নিতে মরিয়া দুই পক্ষ। সম্মেলনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ছুটছেন দলীয় সভানেত্রীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। জেলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। তবে সম্মেলন ঘিরে উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছায় কমিটি ঘোষণা নাও হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে পরবর্তীতে কমিটি ঘোষণা হতে পারে। তৃণমূলের ভাষ্য, এতে পদ বাণিজ্যের শঙ্কা সৃষ্টি হবে। বিতর্ক এড়াতে কোন পথে হাঁটবে কেন্দ্র সেটা সময়ই বলে দেবে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্য নির্বাহী সদস্য মঞ্জুরল মজিদ মাহমুদ সাদী বলেন, সুযোগ পেলে দলের দ্বিধা বিভক্তি দূর করে প্রবীণ-নবীণ নেতাকর্মীদের নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে নেত্রীকে ৫টি সংসদীয় আসন উপহার দেব।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নরসিংদী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আমার সততা আর যতটুকু দক্ষতা আছে সবটুকু নিয়োগ করেই আমি দলকে গোছানোর কাজ করে যেতে চাই।
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নরসিংদী ০১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরল ইসলাম হীর (বীর প্রতীক) বলেন, দুর্বৃত্তদের সম্পর্কে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত। নরসিংদী থেকে দৌরাত্ম্যদের দৌরাত্ম্য শেষ করতেই তৃণমূলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি সভাপতি প্রার্থী হয়েছি। আমাকে যদি পুনরায় সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে আগের মতই সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবো।

নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরল আশরাফ খাঁন পোটন বলেন, নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমাকে দায়িত্ব দিলে নিতে প্রস্তুত আছি।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব বলেন, সম্মেলন সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এক মঞ্চে নিয়ে আসার। নেত্রী আমাকে দায়িত্ব দিলে সব বিভেদ ভুলে দলকে একটি মঞ্চে আনার চেষ্টা করবো

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন