ভরাট, দখল ও দূষনের কবলে আদমদীঘির রক্তদহ বিল মরা খালে পরিণত

ভরাট, দখল ও দূষনের কবলে আদমদীঘির রক্তদহ বিল মরা খালে পরিণত

মোঃ আহসান হাবিব (আদমদীঘি, বগুড়া)

দেশীয় মাছের ভান্ডার বগুড়ার আদমদীঘির রক্তদহ বিল বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। খনন না করায় তলদেশ ভরাট হয়ে সংকুচিত হয়ে গেছে ঐতিহাসিক বিলটি। বিলের যেটুকু অংশ আছে সেটুকু থেকেও কলকারখানার বিষাক্ত পানি, বর্জ্য ও ছাইয়ের দূষণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বহু জাতের দেশীয় মাছ। প্রায় নয় শ’ একর আয়তনের রক্তদহ বিল তিন দশক পূর্ব সময়েও কানায় কানায় পানি আর মাছে পরিপূর্ণ হয়ে থাকত। মিলত প্রচুর দেশীয় মাছ। এই বিল থেকে আহরণ করা মাছ এলাকার চাহিদা পূরণ করে বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার হাট-বাজারে সরবরাহ করা হতো। সে সময় নাটোরের চলন বিলের পরই ছিল এই রক্তদহ বিলের মাছের প্রাচুর্য। রক্তদহ বিলে সুস্বাদু টেংরা, রাম টেংরা, গাংটেংরা, কৈ, ভেদা, পুঁটি, সরপুঁটি, শোল, বোয়াল, আইড়, গুজি আইড়, কাকিলা, পাবদা, পাতাশি, বাইলা, মলা, ঢেলা, টাকি, গুচি, শিং, মাগুর, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, ফলি, চিতল, ফাঁসা, বউরাণী, সুবর্ণ খলিসা, ছোট চিংড়ি, চাপিলা, পিয়ালী, বাইম, তারাবাইমসহ বিভিন্ন জাতের ও নামের দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। সাধারণত বর্ষা কাল শেষে হেমন্ত, শীত ও বসন্ত কালে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ মিলত। সেই বিলে এখন আর ওই সব মাছের দশ ভাগ জাতের মাছও মিলছে না। নানা কারনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ।

বিলে দেশীয় সহনশীল প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ আহরণকারী জেলেরা জানান, এলাকার অসাধু জেলেরা বিলে চায়না দুয়ারী জাল, কারেন্ট জাল ও ভাদায় জাল দিয়ে দেশীয় মাছের ডিম, রেণু ও পোনা সহকারে মাছ আহরণ করায় বিলে দেশীয় মাছের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই বিলের মাছের প্রাচুর্য হারিয়ে যাবার অন্যতম কারন কখনই খনন না করা এবং দখল ও দুষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা। প্রাচীন কালে সৃষ্টি রক্তদহ বিলের তলদেশ উঁচু হয়ে বিলের দুই পাশের বিস্তর এলাকা ধান চাষের মাঠে পরিণত হয়েছে। বিলের প্রস্থ্যের দুই ধার দখল করে পুকুর খনন করেছে এলাকার প্রভাবশালীরা। বিল পাড়ের শহর সান্তাহারে প্রতিষ্ঠিত হাস্কিং, সেমিঅটো ও অটোমেটিক চালকল এবং প্লাস্টিক পণ্যের কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও ছাই তিয়রপাড়া খাল দিয়ে গিয়ে দূষিত করে ফেলে মাছের ভান্ডার রক্তদহ বিলের পানি। এসব নানা কারনে বিলটিতে দেশীয় মাছ না হওয়ায় চরম সংকটে রয়েছে বিল পাড়ের কয়েক গ্রামের কয়েকশত  জেলে পরিবার।

এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার সুজয় পাল; বিল খনন করে নাব্যতা ও পরিধি বৃদ্ধি ও দূষণ মুক্ত করার বিষয়ে, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়ে একযোগে কাজ করার বিষয়ে মত ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যে সব দেশীয় মাছ মিলছে সেগুলো না ধরার জন্য বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় জেলেদের বেধে দেওয়া, দেশীয় মাছ সংরক্ষণে মোটিভেশন ও অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা এবং প্রতি বছর বিলটিতে সরকারি ভাবে পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন