নওগাঁয় ফসলের মাঠ সবুজে ভরে উঠছে শীতকালীন সবজিতে

নওগাঁয় ফসলের মাঠ সবুজে ভরে উঠছে শীতকালীন সবজিতে

বিকাশ চন্দ্র প্রামানিক, নিজস্ব প্রতিনিধি: সবুজে সবুজে ভরে উঠছে ফসলের মাঠ। বির্স্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি সীম গাছের ডগা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, মুলা, করলা, পটোল, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতকালীন সবজির চারা। উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রতিটি মাঠ জুড়ে এখন সবুজের হাতছানি। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকেরা। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। ক্ষেতগুলোতে এখন কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে নওগাঁসহ পার্শ্ববর্তী জেলা গুলোতে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাবে এ উপজেলার কৃষকরা।

তাই মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত কৃষকরা। কাক ডাকা ভোরে কোদাল, নিড়ানী, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে এখন কৃষকরা। তারা জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি ও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিকেল অবধি মাঠেই চারার গোড়ায় পানি ঢেলেই ফিরছেন সবাই বাড়ী। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে কোদাল চালাচ্ছেন, অনেকেই গাছের গোঁড়ালির পাশ দিয়ে ঘোরাচ্ছেন নিড়ানী, কেউবা খালি হাতেই গাছগুলো ঠিক করছেন। কেউবা নেতিয়ে পড়া চারার স্থলে সতেজ চারা প্রতিস্থাপন করছেন, এভাবে শীতকালীন সবজি নিয়ে চলছে কৃষকের কর্মযজ্ঞ। বেড়েই চলছে কৃষকদের কাজের চাপ। ধান চাষে তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না অনেক কৃষক। তাই রকমারি সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন উপজেলার অনেক কৃষক।

উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী লিটন ও মাগুড়াপাড়া গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলক ভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও তুলনামূলক কম। তবে সেবা ক্রটি করা যাবে না। কিন্তু রোগবালাই দমনে সবজি ক্ষেতে কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করতে হয়। স্বল্প সময়েই সবজি বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতিদিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হয়। ক্ষেতে সবজি থাকা পর্যন্ত  প্রত্যেক কৃষকের হাতে কমবেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলের বেলায় সম্ভব না। এছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো। সবমিলিয়ে সবজি চাষকেই এসব কৃষকরা লাভজনক মনে করছেন।

সবজির কদর সারাদেশেই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় সবজি গুনগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানান তারা।

আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ কে এম কাউছার হোসেন বলেন, কৃষকদের সবজি চাষে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বর্তমানে সীম, বেগুন, লালশাক, মুলা শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো এর আবাদ চলছে বলে তিনি জানান। সবজি চাষে যুক্ত উপজেলার কৃষকরা এবার বেশ উৎফুল্ল। কারণ তারা প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশের জন্য এবার উৎপাদিত ফসলের ফলন ও দাম বেশ ভালো পাবেন বলে তিনি মনে করছেন। কৃষি বিভাগের লোকজনের নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। এছাড়া তাদেরকে উৎসাহ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ফলে চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলেও জানান।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন