শেখ হাসিনার জীবন নিরাপদ নয়: ওবায়দুল কাদের

শেখ হাসিনার জীবন নিরাপদ নয়: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার জীবন নিরাপদ নয়-সে কথা বলে আমি নাকি মহাঅন্যায় করে ফেলেছি। এখানে অনেকেই আছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কি জানতেন সকালে কি হবে? এই দেশে চোখের পলকে ১৫ আগস্ট ঘটে গেছে। আমরা সতর্ক থাকব না? নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ কি ভিত্তিহীন? আমাদের বলতেই হবে। বিশ্বাসঘাতক তো আছেই। বিশ্বাসঘাতক যদি না থাকত তাহলে ১৫ আগস্ট ঘটত-এটা কি কারও বিশ্বাস হবে? জিয়াউর রহমানের বিশ্বাসঘাতকতা, খন্দকার মোশতাকের বিশ্বাসঘাতকতা, এসব বলতে গেলে আপনাদের গাত্রদাহ হয়। বিশ্বাসঘাতকতাই তো রক্ত ঝড়িয়েছে।

২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি এখন কত কথা বলে। তারা বলছে, আজরাইল নাকি সরকারের পেছনে ঘুর ঘুর করছে। তারা জানে কিভাবে? তারা কি আল্লাহর ফেরেশতা নাকি? মির্জা ফখরুল আপনি কি আল্লাহর ফেরেশতা? আপনি কিভাবে জানেন আজরাইল কার পেছনে ঘুর ঘুর করছে।

আমাকে তো মারছে, হাসপাতালে পাঠাচ্ছে : তিনি আরও বলেন, আমাকে তো কয়দিন ধরে মারছে! এখন আবার হাসপাতালে পাঠাচ্ছে! গভীর রাতে ফোন আসে, আপনি কি হাসপাতালে? আমি বলি, না আমি তো বাসায়। আবার ফোন করে বলে (কয়েকদিন আগে), বেঁচে আছেন ভাই? কেন? আমরা তো শুনেছি আপনি মরে গেছেন। আমাদের ইন্তেকাল পর্যন্ত তারা করিয়ে ফেলেছে। কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন আজরাইল লাগায় দিছে।

তিনি বলেন, সব আজগুবি খবর, নষ্ট রাজনীতি। এই নষ্ট রাজনীতি এবং নষ্ট কথা তারাই বলে। কি ভয়াবহ। কোনো দেশের রাজনীতিতে এই সংস্কৃতি কি আছে প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলছে। এই গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ রকম ভয়াবহ গুজব ছড়ায়। এটা বিএনপি এবং তাদের দোসরাই করে।

বিএনপির এই জোট থাকবে না : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতো এবারো বিএনপির নেতৃত্বে যে ৫৪ দলীয় জোট হয়েছে। তারা টকশোতে গিয়ে পথ হারা পথিকের মতো কথা বলে। কি করবে, কি বলবে কি কর্মসূচি দেবে- এ নিয়ে ৫৪ দল ৫৪ পদ ৫৪ মত। এ দল ছোট হয়ে আসবে বেশি দেরি নেই। বামে ডানে একাকার। অতি বাম-অতি ডান। এই দৃশ্যপট থাকবে না। গতবারও দেখেছি। ২১ দলীয় জোট। শেষ পর্যন্ত জোটের নেতা কামাল হোসেনই আউট। এখন তো অদৃশ্য রিমোট কন্ট্রোলে বিএনপি চলে। বিএনপি জোটের আন্দোলন চলে রিমোট কন্ট্রোলে, অদৃশ্য নির্দেশে। আর বিদেশিরা কখন সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দেবে সেদিকে তাকিয়ে আছে। লবিং করছে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য।

আরও বলেন, বিএনপি আছে নিষেধাজ্ঞা এবং অদৃশ্য ইশারার রাজনীতি নিয়ে। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। আমরা তাদেরকে দুর্বলও ভাবি না। বিএনপির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিরোধী সব শক্তি এবং বেশ কিছু অপশক্তি এখানে জোট গঠন করেছে। আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের যে রূপকল্প ঘোষণা করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করে যাব।

বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো উসকানি নয় : দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাদের পদযাত্রা, বিভাগীয় সমাবেশ; সেটা আমরা কোনো প্রকার সংঘাত বা উসকানি যেন না দিই। আমাদের পক্ষ থেকে সাংঘর্ষিক কোনো ধরনের পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়। সরকারের যাতে কোনো বদনাম না হয়। আমরা বলেছি নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কোনটা কবে হবে তা আমরা বসে ঠিক করব। তবে সতর্ক থাকা, গণসংযোগ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা, আগুন-সন্ত্রাস এবং ভাঙচুরের যেসব ঘটনা মাঝে মাঝে দেখা দেয় এসব ঘটনার বিরুদ্ধে আমাদের বিরতিহীন কর্মসূচি নির্বাচন পর্যন্ত থাকবে। এখানে পালটাপালটির কোনো বিষয় নেই।

গা ঝাড়া দিয়ে উঠুন : ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলন চলে গেছে অনেকেরই একটু গাছাড়া ভাব। পার্টি অফিসে সন্ধ্যায় গেলে লোকই দেখা যায় না। আগে তো ঢুকতেই পারতাম না। সব প্রার্থী। এখন মনে হচ্ছে প্রার্থী হয়ে তো লাভ নেই, সেজন্য গাছাড়া ভাব আছে। গা ঝাড়া দিয়ে উঠুন। এ সময় আওয়ামী লীগের বিভাগীয় উপ-কমিটিগুলো নতুন করে করার তাগাদা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক।

আরও বলেন, বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অনুরোধ করব-সম্মেলন হয়ে গেছে অনেকদিন কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো জমা হয়নি। আর জমা হলেও সভাপতির নির্দেশে আমি অনুমোদন যেগুলো করি তাকে ফাইনালি একবার দেখাই। তার আগে আমাদের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমাকে তো বলতে হবে এই কমিটি ঠিক আছে।

কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদ : ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার কাছে কালকে অফিস থেকে ২৯টি কমিটি এসেছে। এখন আগে জানতে হবে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা কমিটি দেখেছেন কি না? তারা দেখলে আমি নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে অনুমোদন দিতে পারি। সহযোগী সংগঠন স্বাচিবের এখন কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগই নেই। ছাত্রলীগ এখনো করে নাই। কতদিন হয়ে গেছে সম্মেলনের। মহিলা আওয়ামী লীগ অফিসে যাওয়া যায় না, মহিলাদের লাইন। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। যুব মহিলা লীগেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।

রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্যতা আমার নেই : রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, টকশোতে শুনলাম-‘ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছেন’। তার মানে আমি নেত্রীর ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছি রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য? তার মানে আমি তোষামোদী করছি? শেখ হাসিনার নিরাপত্তা তোষামোদী? আমি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আমাদের পার্টির নেতাদের উদ্বেগ আছে। এদেশের ৩ নভেম্বর ঘটেছে আমরা জানি। ৩ তারিখ থেকে ৭ তারিখ কত অফিসারকে মারা হয়েছে। এই দেশে বিশ্বাসঘাতক কারা? সেখানে আজকে নাকি আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছি? আপনি প্রশ্নটা করেছেন ভালো করেছেন। আমি আগেও বলেছি, মাঝেও বলেছি, এখনো বলছি। সর্বশেষ বলব-রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্যতা আমার নেই।

যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মির্জা আজম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন