রূপগঞ্জে ৫৮ কিলোমিটার বেহাল সড়কে দুর্ভোগ

রূপগঞ্জে ৫৮ কিলোমিটার বেহাল সড়কে দুর্ভোগ

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ

 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। শিল্পোন্নত এই এলাকার বিভিন্ন সড়ক এখন বেহাল। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাজারও মানুষ। জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে তৈরি হয়েছে খানখন্দ ও গর্ত। অনেক এলাকার সড়ক দেবেও গেছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে অন্তত ৮০ গ্রামের বাসিন্দাদের। কয়েক বছর ধরে সড়ক বেহাল থাকলেও সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া থেকে দাউদপুর হয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা সীমান্তবর্তী এলাকা পর্যন্ত এ সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এ ছাড়া ফজুর বাড়ির মোড় হতে ইছাপুরা বাজার পর্যন্ত এবং ইছাপুরা হয়ে ৩০০ ফুট পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাত কিলোমিটার। মুড়াপাড়া থেকে ভুলতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংযোগ সড়ক পাঁচ কিলোমিটার। ইছাখালী হতে নগরপাড়া পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার।
ভুলতা গোলচত্বর থেকে আমলাব পর্যন্ত চার কিলোমিটার, গোলাকান্দাইল থেকে ডহরগাঁও পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার, কালনিবাজার থেকে বেলদি বাজার সড়ক পাঁচ কিলোমিটার, বরপা থেকে সুতালাড়া সড়কটি ছয় কিলোমিটার। কাঞ্চন মায়ারবাড়ি থেকে বিরাব বাজার পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার। বিরাব নদীর ঘাট থেকে করাটিয়া পর্যন্ত চার কিলোমিটার ও ভায়েলা থেকে মাছিমপুর ক্যানেল সড়ক তিন কিলোমিটার।
আর এ সড়ক দিয়ে রূপগঞ্জ, ফজরবাড়ি, সাহাপুর, জাহাঙ্গীর পিতলগঞ্জ ব্রাহ্মণগাঁও, শিমুলিয়া, দেবোই, ইছাপুরা, বাগবের, মুশুরি, নগরপাড়া, ইছাখালী, খামারপাড়া, দেলপাড়া, উত্তরপাড়া, বাগবাড়ী, নয়ামাটি, চানখালী, নবগ্রাম, টিনর, ভিংরাব, হারিন্দা, ভুলতা, পাড়াগাঁও, ভায়লা, মর্তুজাবাদ, হাটাব, মাসুমাবাদ, মঙ্গলকালী, আমলাব, শিংলাবো, কালী, গোলাকান্দাইল, ডহরগাঁও, কালনি, বেলদি, বরপা, সুতালাড়াসহ প্রায় ৮০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে। কিন্তু সড়কগুলো বর্তমানে বেহাল। সড়ক মেরামতে উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বর্ষা মৌসুমে সড়কগুলোর অবস্থা আরও বেহাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর আগেও ওইসব সড়কের অবস্থা এত খারাপ ছিল না। চলাচলের উপযোগী ছিল। সম্প্রতি পূর্বাচল উপশহর, আশপাশে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প, রেডিমিক্স কারখানা ও বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত লোডবাহী বালু, রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন কারখানার মালামাল বহনকারী গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কগুলো দেবে গেছে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে সড়ক দেবে গেছে। এসব বেহাল সড়কের ধুলাবালিতে পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।
বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বৃহত্তর পাইকারি কাপড়ের বাজার গাউছিয়া ও রূপগঞ্জ থানায় আসতে গিয়ে এই ভাঙা এবং বেহাল সড়ক দিয়ে আসতে হয়। এ ছাড়া শিল্পকারখানার হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তা ব্যবহার করে কর্মস্থলে যায়। বেহাল সড়কে চলাচল করতে গিয়ে শুধু গ্রামের মানুষই ভোগান্তিতে পড়ে না, উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভোগান্তিতে পড়েন। এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির ঘটনা ঘটলে বেহাল সড়ক দিয়ে থানা পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও জোরালো ভূমিকা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
খামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ইছাখালী হতে নগরপাড়া রাস্তাসহ অন্য রাস্তাগুলো এখন একদম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় সময় এলাকার লোকজন বড় গর্তে পড়ে আহতের ঘটনা ঘটছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই রাস্তাগুলো সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
বাহ্মণখালী এলাকার মাহাবুব আলম প্রিয় বলেন, আমাদের চনপাড়া-কালীগঞ্জ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। সড়কজুড়ে বড় গর্ত হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
পাড়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, মুড়াপাড়া-ভুলতা সড়কের আমাদের বাড়ির সামনে সবচেয়ে বেশি বেহাল। এখানে পানি জমে মনে হয় ছোট পুকুরে পরিণত হয়েছে। পানিতে গর্ত আরও বড় হচ্ছে। বড় গর্তে গাড়ি উল্টে যাচ্ছে। দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন