মমতার উসকানিতেই আসামে খারাপ পরিস্থিতি: অনুপ

মমতার উসকানিতেই আসামে খারাপ পরিস্থিতি: অনুপ

ভারতের আসাম রাজ্যের তিনসুকিয়ায় পাঁচ বাঙালিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ এনেছেন বিদ্রোহী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা) নেতা অনুপ চেটিয়া।

বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনায় শনিবার আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ তোলেন তিনি।

হত্যাকাণ্ড কারা ঘটিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট না হলেও ঘটনার পরই উলফার পরেশ বরুয়া গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পরেশ বড়ুয়া অভিযোগ অস্বীকার করার পর এবার বিদ্রোহী সংগঠনটির আলোচনাপন্থি অংশের অনুপের বক্তব্যও এলো এ নিয়ে।

সংগঠনের আলোচনাপন্থি অংশের শীর্ষ নেতা অনুপ জানান, সঠিক তদন্ত হলেই এই ঘটনার পিছনে কারা রয়েছে, তা জানা যাবে। তবে হিংসার মূল কারণ হিসেবে তিনি উসকানিমূলক মন্তব্যকেই দায়ী করেছেন। আর সেই তালিকায় প্রথমেই রাখছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তার মতে, তৃণমূল আসলে গোটা বিষয়টার ফায়দা তুলতে চাইছে।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটা উচিত হয়নি। নাগরিক পঞ্জির বিষয়ের পর থেকেই উসকানিমূলক কথাবার্তা হচ্ছিল। তখন থেকেই আমি বলছিলাম, এতে ক্ষতি হবে নিরীহ মানুষদের। বিশেষ করে বাঙালিদের। যারা শহরে থাকেন, তাদের কিছু হবে না। আমার গ্রামের বাড়ির কাছেই ঘটনাটি ঘটেছে। ’৯২ সালে বন্যার সময় উদ্বাস্তু হয়ে ওখানে অনেকে চলে গিয়েছিলেন। যারা মারা গেছেন, তাদের অনেক আত্মীয়স্বজনকে আমি চিনি। এমন ঘটনা কখনওই কাম্য নয়।

তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম থেকেই এ বিষয়ে আন্দোলনে নেমেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ফের তারা পথে নেমেছে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন আবারও প্রতিনিধি দল আসামে যাবে- এমন প্রশ্নে অনুপ বলেন, সহানুভূতি দেখাতে আসতেই পারে। কিন্তু, এখানে এসে যদি আবার ওরা উসকানিমূলক কথা বলেন, তা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ওরা কিছু দিন পরে আসলেই ভাল!

তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আমি বার বার বলছি, উসকানিমূলক কথা বলবেন না। তা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। আসলে এ সবের জন্যেই তো সমস্যা শুরু হয়েছে।

অনুপ বলেন, আমরা কখনও বাঙালিদের বিরুদ্ধে নই। আমরা তাদের সঙ্গে মেলামেশা করি। আমি কিছু দিন আগেই তিনসুকিয়ায় বৈঠক করে এসেছি। বাঙালি সংগঠনগুলির পাশাপাশি বিদ্বজ্জনদের সঙ্গেও কথা বলেছি। সেখানে বলেছিলাম, আপনারা কোনও চিন্তা করবে না। আমরা আসলে সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে চলেছি। এর পর যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন, সমস্যা হতেই পারে। পরিস্থিতি কিন্তু খারাপ হচ্ছে, এটা মাথায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী, সে হিন্দু হোক বা মুসলমান, তাদের আসাম গ্রহণ করেছে। আর কত দিন এ সব চলবে? এখনও আসামের পরিস্থিতির পরিবর্তন হল না। এখনও কেন্দ্রীয় সরকার যে আমাদের অবহেলা করছে সে কথা অস্বীকার করা যায় না। সংসদীয় কমিটির কাছে আমি বলেছিলাম, এনআরসি বিল পাশ করলে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠবে আসাম। শুনল না। সে জন্যেই তো এই সমস্যা হল। এর পর এখানকার বাঙালিদের উসকানিমূলক কথা বলা উচিত হয়নি।

উলফা নেতা অনুপ বলেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেউ যেন কোনও উসকানিমূলক মন্তব্য না করেন। যদি কেউ করেন, তার প্রভাব আসামে পড়বেই। আমরা একসঙ্গে মিলে যাতে কাজ করতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই। বাঙালিদের পাশে আছি। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা মিটিয়ে নেওয়া উচিত।

পরেশ বরুয়া, অরবিন্দ রাজখোয়া, ভৃগু ফুকনের সঙ্গে উলফা গড়েছিলেন অনুপ চেটিয়া ওরফে গোলাপ বরুয়া।  ১৯৯২ থেকেই তিনি ফেরারি ছিলেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে গ্রেফতার হন অনুপ। সাজার মেয়াদ শেষ হলেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে সেখানকার জেলেই ছিলেন। বন্দিপ্রত্যার্পন চুক্তি হওয়ার পর, বাংলাদেশ তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়।

আসামের তিনসুকিয়া জেলায় বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামকে (উলফা) সন্দেহ করা হচ্ছে। উলফা বাঙালিদের উপর হামলা চালাতে পারে, সাত দিন আগে এমন তথ্য আসাম সরকারকে জানিয়েছিল দিল্লি।

কলকাতায় শুক্রবার একাধিক কালী পূজার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, গুজরাটে বিহারি খেদাও হচ্ছে, আসামে বাঙালি খেদাও চলছে। সারা দেশে অশুভ সঙ্কেত মনকে ভারাক্রান্ত করে রেখেছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment