‘ক্ষমতায় গেলে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা হবে’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার নিজের মনোনীত লোকদের মামলায় জেল খাটছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার মামলা দেয়নি। দিয়েছে তারই মনোনীত লোকরা। দশ বছর ধরে সেই মামলা চলেছে। সেই মামলাতেই আজ সে কারাগারে। তারেক রহমান গ্রেনেড হামলা মামলা ও মানি লন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে লন্ডনে পালিয়ে রয়েছে। আল্লাহ যদি দিন দেয়, তাহলে ক্ষমতায় গেলে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নৌকা মার্কার প্রচারণায় এসে শনিবার (২২ ডিসেম্বর) সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এদেশের মানুষ তাদের কর্মকাণ্ড দেখে প্রত্যাখান করেছে।’ হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রেজা কিবরিয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে বোমা হামলা করে হত্যা করেছে বিএনপি। অথচ তারই ছেলে এবারের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছে।’ হবিগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এদিকে ইনাম আহমেদ চৌধুরীর বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইনাম চৌধুরী বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। আমি তাকে স্বাগত জানিয়েছি। বিএনপি প্রমাণ করেছে, টাকা দিলেই নমিনেশন পাওয়া যায়। যে ব্যক্তি যত বেশি টাকা দেবে, তাকে নমিনেশন দেওয়া হয়। লন্ডনে বসে দলের নাটাই চালায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান।’ প্রসঙ্গত, ইনাম চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বছরের জানুয়ারি মাসে সিলেট থেকেই নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছি। আবারও বিজয়ের মাসে আমি নৌকায় ভোট চাইতে আপনাদের মধ্যে হাজির হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেশে গণতন্ত্র নিয়ে এসেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়। বিশ্বের কাছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সিলেট বিভাগের উন্নয়নের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টাঙুয়ার হাওরে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করে দিচ্ছি। হাওরবাসী যেনো শুধু ফসল না, হাঁস-মুরগির চাষ ও অন্যান্য পেশায় যুক্ত হতে পারেন, সেজন্য কাজ করছি। তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। এখানকার প্রাচীন নাম ‘শ্রীহট্ট’ নামে এখানে (সিলেটে) আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। সিলেট বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আপনারা জানেন, একসময় শুধু চট্টগ্রামে চায়ের নিলাম হতো। সিলেটে চায়ের নিলামের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চা-শ্রমিকরা নৌকায় ভোট দেয়। তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।’ এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট বিভাগের প্রত্যেকটা জেলায় সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিলেট বিভাগ আমরা দিয়েছি, এখন অবকাঠামো নির্মাণ করে দিচ্ছি, যাতে বিভাগ হিসেবে সিলেট দাঁড়িয়ে যেতে পারে। লন্ডন থেকে সরাসরি বিমান আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। নান্দনিক স্টেডিয়াম করে দিয়েছি, যা দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিলেট বিভাগের সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। হাওর-বাওর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার প্যানেল করে দিয়েছি যাতে মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে যায়। শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। এখানে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। সিলেটের উন্নয়নে ইতোমধ্যে জানুয়ারিতে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনর করেছি। এছাড়াও সিলেটের চার জেলার উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’ নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি, গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। আওয়ামী ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নয়নে কাজ করে। এই সংগঠন উপমহাদেশের অন্যতম পুরাতন সংগঠন। এটি বঙ্গবন্ধুর সংগঠন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন, যাতে সরকার গঠন করে আবারও আপানাদের জন্য কাজ করতে পারি। আওয়ামী মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে।’ শনিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়। জনসভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সিলেট কালেক্টরেট জামে মসজিদের খতিব মো. শাহ আলম ও গীতা পাঠ করেন জয়ন্ত বিজয় চক্রবর্তী। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন। আরও খবর: আগামীতে ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না: শেখ হাসিনা

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment