জাগ্রত সড়ক ঘুমন্ত ফুটওভার ব্রিজ

 মোঃশাহাদাত হোসেন নিশাদ,সরকারি তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধিঃ

রাজধানী ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ। প্রায় ৬৩ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে তিতুমীর কলেজ পরিবার। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় প্রত্যহ মুখরিত হয় তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে। কলেজের প্রধান ফটকের সামনেই আমতলী থেকে বনানী মেইন রোড। বিরামহীনভাবে দিনেরাতে চলছে অহরহ যানবাহন। প্রধান ফটকের বাম হাতেই দাঁড়িয়ে আছে ফুটওভার ব্রিজ। কিন্তু সেখানে বেহাল দশা। সেখানে পথচারীর তুলনায় একটু খানি আড্ডা দেওয়ার লোকরাই বেশি । আড্ডা দিবেই না কেন? নিরিবিলি পরিবেশ,সবুজ গাছের সমারহ রয়েছে ওভার ব্রিজটিতে। তাইতো বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সেখানে গল্পগুজব করার উদ্দেশ্যে গিয়ে থাকে। যাবেই না? ওভার ব্রিজটিতে যদি মানুষ পারাপার না হয় তাদেরই বা দোষ কি? ব্যাগ কাধে তরিকুল ইসলাম। তিতুমীরেরই ছাত্র। এক হাতে ফোনে কথা বলছেন এবং আরেক হাতে বাস থামাতে থামাতে রাস্তা পার হচ্ছেন। তখনও গাড়ি থামবে কিনা এমন কোনো সিগন্যাল পায়নি তরিকুল। চলন্ত রাস্তায় যেকোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারত দুর্ঘটনা। অথচ পাশেই রয়েছে যাতায়াতের ফুটওভার ব্রিজও। রাস্তা পার হয়ে বলেন, সময় কমতো তাই ওঠা হয় না। এভাবেই যাতায়াত করি, অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এতে নিজের জীবন ঝুঁকিতে কী না সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নীরবে চলে যান এই শিক্ষার্থী। শুধু তরিকুল ইসলাম নয় এই চিত্র প্রতিদিনের । প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ফুটওভার ব্রিজ থাকার শর্তেও সেটি ব্যবহার না করে রাস্তা দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এতে করে তাদের জীবনের ঝুকি যেমন বাড়ছে। ঠিক তেমনি অমান্য করছে আইন।এখন যাদের জন্য আইন তারাই যদি অমান্য করে তাহলে কয়জনকে ধরে রাখা যাবে? আবার তাও যদি হয় শিক্ষার্থী এদের তো একটা কথা বার বার বললেও বিপদ। এমই উত্তর দিল কলেজের সামনে থাকা এক ট্রাফিক পুলিশ। বর্তমানে ঢাকা সিটিতে অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা হয় জনগণের অসচেতনতার কারণে। তিতুমীর ক্যাস্পাসে এত সুন্দর যাওয়া আসার জন্য ফুটওভার ব্রিজ আছে, কিন্তু ব্যবহারের মত কোনো শিক্ষার্থী নেই। নিজেও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন এবং রাস্তায়ও যানজট লেগে যাচ্ছে। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করার কারণে ভ্রামমাণ আদালতের কাছে অনেকেই জরিমানাও দিয়েছেন। ফুটওভার ব্রিজের সিড়িতে আড্ডারত অবস্থায় ছিলেন কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। একটু এগিয়ে গিয়ে উনাদের অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ফুট ওভার ব্রিজ রয়েছে ঠিকই কিন্তু মানুষ এতটাই অলষ যে এই ফুট ওভার ব্রিজ ব্যাবহার করতে কষ্ট হয়। যেখানে মানুষের চলাচলের নাম মাত্র গন্ধ নেই সেখানে তো আমরা বসে আড্ডা দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আরেকজন বলেন ,এই কলেজে এত হাজার স্টুডেন্ট । এত স্টুডেন্টের জন্য যদি মাত্র একটা ওভার ব্রিজ ব্যবহারের জন্য নির্মান করে তাহলে তো ওভারব্রিজ পার হতেই দুই ঘন্টা লেগে যাবে। কথায় বুঝাই যাচ্ছে তাদের আরেকটি ফুটওভার ব্রিজ দরকার। যাই হোক সেটা অবশ্যই সরকার বিবেচনা করবে। শুধু তিতুমীর কলেজ নয় রাজধানীর অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজের চিত্রই এমনই। সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করে রাজধানী জুড়ে ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করলেও অসচেতনতার কারণে তা ব্যবহার করছে না নগরবাসী। মানুষের ব্যস্ততা এতটাই অলস করে তুলেছে যে ফুট ওভার ব্রিজ ব্যাবহার করার মত সময় তাদের নেই কিন্তু জীবনের ঝুকি নেওয়ার মত সাহস তাদের আছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। অথচ নগরবাসীর একটু সচেতনতাই পারে এসব অনাকাক্ষিত দুর্ঘটনা কমাতে। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ভ্রামমাণ আদালতের কাছে অনেকেই দিয়েছেন জরিমানাও। এত কিছুর পরেও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাড়ছে না। কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে আমরা সাতে সাথে ড্রাইভারকে দোষ দিই। বেপরোয়া ভাবে অনেক ড্রাইভার আছে যারা গাড়ী চালায়। এটা তাদের অন্যায় মানলাম কিন্তু আমরা যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হই সেটা কি অন্যায় নয়? একজন ড্রাইভার যখন গাড়ী চালায় তখন তার লক্ষ্য থাকে সামনের দিকে এমন সময় হঠাৎ যদি কেউ গাড়ীর সামনে চলে আসে তখন দূর্ঘটনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই আসুন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নিজে সচেতন হই। অন্যকে সচেতন করি। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি ,সড়ক দূর্ঘটনা রোধে এগিয়ে আসি। মনে রাখবেন সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। যদি জীবনই না থাকে কি করবেন এই সময় দিয়ে?

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment