বাউফলে ধানের বাজারে দর পতন, কৃষকের মাথায় হাত

আবাদ কারা আমন ধান প্রন্তিক কৃষকরা গোলায় তুলতে পারলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পাওয়ার কারণে মাথায় হাত পড়েছে পটুয়াখালীর বাউফল অঞ্চলের কৃষকদের। বর্তমানে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে সারে ৪৯০ থেকে ৫৮০ টাকায়। অপ্রত্যাশিত ভাবে ধানের দাম কম হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা এখন দিশেহারা।

দেশব্যাপী মিল মালিক ও আড়ৎদার সিন্ডিকেট এবং সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু না করায় ধান বাজারের চলছে এমন বেহাল অবস্থা। ধান বিক্রি করে চাষের খরচ হওয়া টাকা না ওঠায় ফলে আগামীতে ধান চাষ করা নিয়েও আশংকা রয়েছে কৃষকদের মধ্যে।

বাউফল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বাউফলে ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) এবং ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে দেশি জাতের আমন চাষ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে বাউফলে আমান ক্ষেতের তেমন ক্ষতি না হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

সরেজমিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম ধানের হাট বাউফলের কালাইয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে কৃষকরা হাজার হাজার মণ ধান বিক্রির জন্য এনেছেন। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় ধান বিক্রি করতে পারছেন না। প্রতি বছর এ বাজার থেকে ধান ক্রয়ের জন্য দিনাজপুর, রংপুর, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, নওগাঁ এবং পিরোজপুররসহ দেশের অনেক এলাকা থেকে ব্যাপারীরা আসেন। কিন্তু এ বছর এখনো কোন ব্যাপারী কালাইয়া বাজারে আসেননি। স্থানীয় আড়ৎদাররাও ধান কিনছেন না। ফলে ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

উপজেলার মমিন চর এলাকার কৃষক আলমগীর গাজী বলেন, গতবছরও এই সময় ধানের বাজার ৮০০ টাকার উপরে ছিল। একমণ ধান পেতে বীজ বপণ থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত শ্রমিক এবং সারসহ প্রায় ৭০০ টাকা খরচ হয়। বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রতিমণ ধানে ১০০ টাকা লোকসান হচ্ছে। এভাবে ধানের বাজার থাকলে আগামিতে আর ধান চাষ করবো না।

একই অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেছেন ধান বিক্রি করতে আসা অন্য কৃষকরা। বাউফল উপজেলা কৃষি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, বাউফলে প্রায় ৫৪ হাজার তালিকাভূক্ত কৃষক রয়েছে। যাদের উৎপাদিত ধানের পরিমাণ হবে প্রায় ১৫ লাখ টন। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ ধান সরকারের পক্ষ থেকে ক্রয় করা সম্ভব হবে না।

তবে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ শেষ পর্যন্ত তাদের ধান কম টাকায় ব্যাপারী, আড়ৎদার কিংবা মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হবে।

কালাইয়া বাজারের আড়ৎদার জয়নাল সরদার, মানিক কৃষ্ণ কুন্ডু, কার্তিক সাহা, গৌতম বণিকসহ একাধীক ব্যবসায়ী জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। যার কারণে ব্যাপারীরা ধান কিনতে কালাইয়া বাজারে আসছেননা।

সরকারিভাবে কৃষকদের থেকে সরাসরি ধান ক্রয় সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই প্রায় চার হাজার কৃষকদের থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ২ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে। মাত্র চার হাজার কৃষকদের থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হলে বাকি কৃষকদের লাখ লাখ মেট্রিক টন ধান বিক্রিতে সরকারিভাবে কোন মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে কী না এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি কৃষি কর্মকর্তা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন