৭১ বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার মধ্যদিয়ে চাঁদপুর মুক্ত দিবস পালিত

৭১ বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার মধ্যদিয়ে চাঁদপুর মুক্ত দিবস পালিত

শ্যামল সরকারঃ

 ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর  মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয়  চাঁদপুর জেলা। জেলার আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের ধ্বনি। উত্তোলিত হয়  লাল-সবুজের পতাকা।  মুক্তির স্বাদ পাওয়া হাজার হাজার মানুষের জয় বাংলা  ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো চাঁদপুর জেলা ।

দিবস টি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক বুদ্ধিজিবি সহ সর্বস্থরের মানুষ নানান কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে, সকালে অঙ্গীকারের পাদদেশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় জেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদ,কার্যালয় প্রঙ্গন থেকে মুক্তিযোদ্ধের বিজয় মেলার কর্মকর্তাগন শেভাযাত্রা করে অঙ্গিকার সম্মুখে অবস্হান করে। সেখানে মুক্ত দিবস উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠীত হয়।

জেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ও বিজয় মেলার স্মৃতিচারন পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধা ইয়াকুব মাস্টারের সভাপতিত্বে ও বিজয় মেলার মহা- সচিব হারুন আল রশীদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।এসময় বক্তারা বলেন,আজকের দিনে চাঁদপুর পাকিস্তান হানাদার মুক্ত হয়েছিল।

এখন আবার পাকিস্তান হানাদার বাহীনির পেতাত্মারা বিজয়ের মাসে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। তরা জাতীর পিতার ভাস্কর্য ভাংচুর করেছে। তারা এ আঘাত করে জানান দিতে চেয়েছে। তাদের আমরা দাঁত ভাঙ্গা হবাব দিব। আমরা মুক্তিযুদ্ধারা জাতীর পিতামবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সে দিন জীবন বাজী রেখে ৯ মাস যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর কে হানাদার মুক্ত১৯৭১ সালের এ দিনে চাঁদপুর পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। চাঁদপুর থানার সামনে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে পাক হানাদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিং এর মাধ্যমে প্রথম আক্রমনের সূচনা করে। প্রথম দিনেই হামলায় চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারের একজন নারী পথচারী নিহত হন। পর দিন ৮ এপ্রিল বিকেলে প্রায় ৫শ’ পাকসেনা বোঝাই একটি বহর চাঁদপুর আসে।চাঁদপুর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে তারা।

এ স্কুলের মাঠ থেকে প্রতিদিনের ন্যয় লতুফা বেগম নামে এক বৃদ্ধা গরু-ছাগল বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পাক বাহিনীর সদস্যরা রাতের খাবার জোগাড় করার জন্যে প্রথম অপারেশন হিসেবে ওই বৃদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে এবং বৃদ্ধার একটি গরু ও একটি ছাগল নিয়ে তারা রাতের খাবার খান। আর পাক সেনাদের অফিসারদের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্টহাউজটি নির্ধারণ করা হয়েছিল

।কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের বর্বরতম হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী তরপুরুচন্ডী গ্রামের বাসিন্দা মো. নান্নু মিজি জানান, তিনি এবং তার বড় ভাইকে সন্ধ্যার দিকে এনে কবর খুড়ার জন্য নির্দেশ করে। তখন তারা বাড়িতে যাবে বলে জানালে তাদেরকে বেধম পিটিয়ে আহত করে এবং জোর পূর্বক তাদেরকে দিয়ে ৩টি কবর খুড়ে। ওই কবরই মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত ৩ জন পাক সেনা সদস্যকে স্কুলের পিছনে কবর দেয়া হয়।

এদিকে চাঁদপুর মুক্ত দিবসে সকল মুক্তিযুদ্ধা সুশীল সমাজ, ও সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের সকল সৃতি রক্ষায় সরকার তথা সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান, এ ব্যাপারেঅতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃৃত রক্ষার্থে চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৩ সালে বড়স্টেশনের বদ্ধভূমিতে নির্মাণ করা হয় ‘রক্তধারা’।

এরপূর্বে চাঁদপুরের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুশীল, শংকর ও খালেক এর নামে ট্রাক রোডে নির্মাণ করা হয় ‘মুক্তিসৌধ’ এবং চাঁদপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে লেকের উপর দৃশ্য ভাসমান মুক্তিস্মৃতি সৌধ ‘অঙ্গীকার’ নির্মাণ করা হয়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্মুখে স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুর পৌরসভার ৫ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় ‘শপথ চত্বর’। এব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন  তিনি। 

আপনি আরও পড়তে পারেন