আতশবাজির রঙিন আলো কীভাবে হয়?

আতশবাজির রঙিন আলো কীভাবে হয়?

আতশবাজি মানেই যেন আনন্দ! বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আনন্দ-উদযাপনে আতশবাজির ব্যবহার পুরনো। অথচ আমরা অনেকেই জানি না, আতশবাজির এই উজ্জ্বল রঙিন আলোর রহস্য কী?

আতশবাজির মধ্যে থাকে একটি সহজদাহ্য মিশ্রণ। যা বাতাসের সাহায্য ছাড়াই জ্বলতে পারে। এজন্য প্রধানত ব্যবহার করা হয় পটাসিয়াম ক্লোরেট। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় পটাশিয়াম নাইট্রেট অথবা সোডিয়াম নাইট্রেট। এছাড়া দাহ্য পদার্থ হিসেবে থাকে কাঠ-কয়লার গুঁড়ো, সালফার বা গন্ধক ইত্যাদি। আগুন লাগলে, পটাসিয়াম ক্লোরেট থেকে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন বেরিয়ে আসে। আর তারই সাহায্যে অন্য পদার্থগুলো জ্বলতে থাকে। এই হলো নানা রকম আতশবাজির আসল বিজ্ঞান রহস্য।

আমাদের জানা সবচেয়ে প্রাচীন বিস্ফোরক পদার্থ হলো বারুদ। পুরনো দিনে, বিস্ফোরক পদার্থ হিসেবে, কামান-বন্দুকে এটিই সর্বত্র ব্যবহার করা হতো। বারোশ পঞ্চাশ সালে রজার বেকন সর্বপ্রথম বারুদের বর্ণনা করেন। তখন বারুদের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হতো সোরার সঙ্গে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে কাঠ কয়লার গুঁড়ো এবং সালফার বা গন্ধক। পরবর্তীকালে আরও উন্নতমানের যে বারুদ ব্যবহৃত হয়, তার উপাদান ছিলো এই রকম- পটাসিয়াম নাইট্রেট বা সোরা-পঁচাত্তর শতাংশ, কাঠ-কয়লার গুঁড়ো-পঁনেরো শতাংশ এবং সালফার (বা গন্ধক)-দশ শতাংশ। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে অনেক উন্নতমানের বিস্ফোরক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়, যেমন-নাইট্রোগি¬সারিন, গান-কটন, কর্ডাইট প্রভৃতি। সেজন্য কামান-বন্দুকে এখন আর বারুদ ব্যবহৃত হয় না।

আতশবাজির রং-মশালে থাকে প্রধানত ম্যাগনেসিয়ামের গুঁড়ো। বাতাসের সংস্পর্শে ম্যাগনেসিয়াম যখন জ্বলে, তখন খুব উজ্জ্বল আলো উৎপন্ন হয়। চারিদিক আলোয় ছেয়ে যায়। তারাবাতি যখন জ্বলে, তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে যায়। এর কারণ ফুলঝুরি বা তারাবাতিতে স্ফুলিঙ্গ বা আলোর ফুলকি সৃষ্টি করার জন্য সীসার যৌগ, লোহার গুঁড়ো বা অ্যালুমিনিয়ামের গুঁড়ো ইত্যাদি মিশিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে বাজারে রয়েছে, রঙ-বেরঙের আলো সৃষ্টি করার হরেক রকম আতশবাজি। এসব আতশবাজিতে বিভিন্ন রঙের আলো সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রকম ধাতব লবণ ব্যবহার করা হয়। যেমন অ্যান্টিমনি বা আর্সেনিকের যৌগ থাকলে উৎপন্ন হয় উজ্জ্বল সাদা রঙ। তেমনি বেরিয়াম লবণ থাকলে পাওয়া যায় সবুজ আলো। স্ট্রনসিয়াম লবণ থেকে উজ্জ্বল লাল আলো। তামার লবণ থেকে নীল। সোডিয়াম লবণ থেকে সোনালী হলুদ। আর পটাসিয়াম লবণ থেকে উজ্জ্বল বেগুনী আলো। তাই রঙ-বেরঙের আতশবাজি পোড়ালে, উৎসব খুব জমে ওঠে। সবাই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে যায়।

তবে, মনে রাখতে হবে, আতশবাজি পোড়ানো মানেই আগুন নিয়ে খেলা আর চরম ক্ষতিকর শব্দদূষণ ঘটানো। সব রকমের আতশবাজিই অনেক ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। আতশবাজি পোড়ানোর সময় অসাবধানতার দরুণ হঠাৎ কোথাও আগুন লেগে যেতে পারে। বাড়ি ঘর পুড়ে যেতে পারে এবং তার ফলে প্রভূত ক্ষতি হতে পারে। সে কারণে ঐ সময় প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। এবারের করোনাকালীন বছরের প্রথম প্রহর বা থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি যেনো খারাপ সময়টাকে আরও খারাপ করে না দেয় সে প্রত্যাশার পাশাপাশি সচেতন থাকা জরুরি। 

আপনি আরও পড়তে পারেন