নরসিংদীর রায়পুরায় নির্মাণের কয়েকদিনের মধ্যেই ব্রিজে ফাটল; জনমনে সংশয়

নরসিংদীর রায়পুরায় নির্মাণের কয়েকদিনের মধ্যেই ব্রিজে ফাটল; জনমনে সংশয়

সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি:


নরসিংদীর রায়পুরায় নির্মানের কয়েকদিনের মধ্যেই ব্রিজে ফাটল দেখা দেওয়ায় চলাচলের ক্ষেত্রে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার অমিরগঞ্জ মরা নদীর খালের উপর নির্মিত ব্রিজটিতে এ ফাটল দেখা দেয়। এলাকাবাসী বলছে বাস্তবায়নকারী সংস্থার সুষ্ঠ তদারকির অভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দ্বায় সাড়াভাবে কাজ করে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে।

জানা যায়, নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের আমিরগঞ্জ মরা নদীর খালের উপর দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট প্রকল্পের অধিনে ২০১৮-১৯ বরাদ্ধে মেসার্স জেএম ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৩৮ ফুট দীর্ঘ এ ব্রিজটি নির্মান করেন।

যার প্রাক্কালিন ও চুক্তি মূল্য ছিল ৩৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৪ টাকা। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে বিগত প্রায় ৭/৮ মাস আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজি উদ্দিন রাজু উদ্বোধন করেন। কিন্তু নির্মাণের কয়েকদিনের মধ্যেই ব্রিজটির বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়। পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ওই ফাটল ঢাকতে সিমেন্ট বালির মিশ্রনে লেপ দিয়ে যায়।

সম্প্রতি ‘ কার স্বার্থে এই ব্রিজ’ শিরোনামে জোনাকি টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সনে আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের অপর একটি ব্রিজ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর টেলিভিশনের ফেইজবুক ম্যাসেঞ্জারে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংযোগ সড়ক নাই এমন কয়েকটি ব্রিজের ছবি পাঠিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ জানান। এলাকাবাসী অনুরোধে এই প্রতিবেদক রায়পুরা উপজেলার আমিগঞ্জ এলাকার সরেজমিনে যায়।

এসময় এলাকাবাসী জানায়, মরা নদীর উপর নির্মাণকৃত ব্রিজটি কোন সংযোগ সড়ক না থাকায় তা তাদের কোন উপকারে আসছেনা। শুকনা মৌসুমে কিছুটা চলাচল করতে পারলেও বছরে প্রায় ৮ মাসই ব্রিজের চারপাশ পানিতে ডুবে থাকে। এছাড়াও ব্রিজটি নির্মাণের কয়েক দিনের মধ্যেই বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়। যা ঠিকাদারী সংস্থা সিমেন্ট বালু দিয়ে কোন রকমে ঢেকে দিয়েছে।

সামসু মিয়া নামে এক এলাকাবাসী বলেন, ‘একে তো ব্রিজে উঠার জন্য নাই কোন রাস্তা, তার উপর ব্রিজের বড় বড় ফাটা, এই ব্রিজে উঠলেই ভয় করে কখন না ভাইঙা পরে।’

মো: আরেফিন নামে এক বয়োবৃদ্ধ এক এলাকাবাসী বলেন, ‘ব্রিজে কোন রাস্তা না থাকা এটা আমাদের কোন কাজে আসছেনা। ব্রিজের রাস্তা জন্য দুই-তিন আগেও একজন মাছওয়ালা সব কিছু লইয়্যা পড়ে গেছে। আর ব্রিজে যেই ফাটল দিছে আল্লাহই জানে কবে ঝড়ে ভাইঙা পড়ে।’

এসময় নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক যুবক বলেন, ‘এই খানে ব্রিজ করতে কে বলছিল? ব্রিজই যখন বানাইয়েছে তখন ব্রিজে উঠার রাস্তা বানাইল না কেন। আসলে কারো নিজের স্বর্থ সিদ্ধি করতে ব্রিজের এই বরাদ্ধ আনছে।বরাদ্ধের একটা অংশ চলে যায় বাস্তবায়ন সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের পকেটে । যার ফলে তাদের কোন তদারকি ছিলনা। ফলে ব্রিজ বানাইতে না বানইতেই কয়েক জায়গায় ফাটল দেখা দেয়।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ব্রিজ নির্মানের সাথে সাথে রাস্তার মাটি ভরাটের জন্য ফালানোর জন্য ফাটল নয় ব্রিজের গায়ে চির ধরেছিল।

পূর্ব থেকেই যোগাযোগ করে রায়পুরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবানয়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিনে কার্যালয়ে গেলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তার জন্য প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টার অপেক্ষা করার পর তিনি উপজেলা পরিষদে আসলেও এ প্রতিবেদকের সাথে স্বাক্ষাৎ না দিয়ে ফোন করে ব্রিজের সংযোগ সড়কের কাজ হয়ে যাবে বলে জানান। আর এ কাজের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

ব্রিজের ফাটলের বিষয় তুলতেই ওই কর্মকর্তা প্রতিবেদক কোথায় আছে জানতে চান এবং তাকে একটু বসতে বলেন। পরে একটি খাম দিয়ে তার অফিস সহকারীকে প্রতিবেদকের কাছে পাঠান দেন। এরপর তার সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করলেও ফোন রিসিভ না করায় তা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে জোনাকী টেলিভিশনের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করতে কার্যালয়ে গিয়ে তাকে না পেয়ে মোবাইলে কথা বললে তিনি জানান, খাম দিয়ে তিনি কাউকে পাঠাননি। শুধু প্রতিবেদককে বলেছিল তার সাথে দেখা করতে একজন লোক যাবে।

v

আপনি আরও পড়তে পারেন