আল্লাহর সর্বশেষ প্রেরিত পুরুষ মহানবী মুহাম্মদ সা: ইসলামকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে সামান্য কোনো সুযোগও হাতছাড়া করতেন না। এজন্য আরব উপত্যকার বাইরে বিভিন্ন ভূখণ্ডের রাজা-বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে একাধিক চিঠি লিখেন তিনি।
হিজরতের ষষ্ঠ বছরে কুরাইশদের সাথে মুসলমানদের যে সন্ধিচুক্তি হয়, সেটিকে আল্লাহর রাসূল সুবর্ণ সুযোগ মনে করলেন এবং এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী ইসলামকে ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন বড় বড় রাজা-বাদশাহর কাছে চিঠি লিখলেন।
তিনি কনস্টান্টিনোপলের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে যে চিঠি লিখেছিলেন, তা এখানে তুলে ধরা হলো–
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম!
এই পত্র আল্লাহর রাসূল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি। শান্তি, নিরাপত্তাসহ সত্যপথের অনুসারী ও অনুগতদের জন্য। অতঃপর, আমি আপনাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিচ্ছি। আপনি যদি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেন তাহলে নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত থাকবেন। আপনি যদি মুসলিম হন তাহলে দ্বিগুণ সওয়াব পাবেন।
বিপরীতে যদি ইসলাম প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে আপনার সব প্রজার গুনাহও আপনার কাঁধে পড়বে। হে আহলে কিতাব! আসুন এই কালেমার দিকে, যেই কালেমা নিয়ে আমাদের ও আপনাদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তা হলো– আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করব না, কোনোকিছুকে তাঁর সাথে শরিক করব না। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ইলাহ (উপাস্য) মানব না। এই দাওয়াত থেকে যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলে দিন, তোমরা সাক্ষী থাকো আমরা মুসলিম।’
চিঠির প্রতিক্রিয়া
ইবনু সা’দ তার তাবাকাত নামক গ্রন্থে লিখেছেন, হিরাক্লিয়াস নবীজীর পত্র পাঠ করে রাজ্যের সব আমির-ওমারা ও রাষ্ট্রের সব মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের একত্র করেন। রাজসভায় তাদের উদ্দেশে বলেন, হে রোম সাম্রাজ্যের অধিবাসীরা, তোমরা কি তোমাদের সফলতা লাভে আগ্রহী? তোমাদের রাজত্ব স্থায়ী ও দীর্ঘ হওয়া এবং মহান যিশুর আদর্শে প্রতিষ্ঠিত থাকা কি তোমাদের কাম্য?
পারিষদবর্গ জবাব দিলেন : জ্বী, আমরা তো চাই-ই। তো এখন নতুন কী দায়িত্ব আমাদের?
হিরাক্লিয়াস শুনিয়ে দিলেন, এই নবীর আনুগত্য করা লাগবে।
হিরাক্লিয়াসের এই শেষ কথাটি শুনতে সভাসদগণ প্রস্তুত ছিলেন না। উপস্থিত সব আমলাগণ হইচই ও চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলেন। উত্তেজনা দেখা দিল তাদের মধ্যে। পক্ষ-বিপক্ষ হয়ে সংঘাতে জড়ালেন তারা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্রুশ উঁচিয়ে ধরলেন।
হিরাক্লিয়াস তাদের বেগতিক অবস্থা দেখে বুঝতে পারলেন– এরা কখনোই মানুষ হবে না; ইসলাম গ্রহণ তো দূরের কথা। তিনি আশাহত ও নিরাশ হলেন। এমনকি নিজের জীবন, রাজত্ব ও সিংহাসন হারানোর ভয় পেয়ে বসে তাকে।
তৎক্ষণাৎ তিনি তাদের চুপ করিয়ে দেন এবং কৌশল খাটিয়ে বলেন, আরে! আমি শুধু তোমাদের ভেতরের অবস্থাটা যাচাই করতে চাইলাম। দেখতে চেয়েছি তোমরা তোমাদের আকিদা-বিশ্বাসে কতটুকু মজবুত ও পরিপক্ক। যা হোক, আকিদা ও ধর্মের সাথে তোমাদের এই গভীর আন্তরিকতা ও কঠোরতা আমাকে উৎফুল্ল করেছে।
[শায়খ ড. মোহাম্মদ সা‘ঈদ রামাদান বুতির ‘ফিকহুস সিরাহ’ অবলম্বনে]