লালপুরে কমেছে শুঁটকি উৎপাদন, দাম বাড়ার আশঙ্কা

লালপুরে কমেছে শুঁটকি উৎপাদন, দাম বাড়ার আশঙ্কা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাট-বাজারগুলোতে চাহিদার তুলনায় দেশীয় মাছের যোগান কিছুটা কমেছে। ফলে দাম বেড়েছে তুলনামূলক বেশি। আর চাহিদা অনুযায়ী কাঁচা মাছ না পাওয়ায় শুঁটকির উৎপাদন কমেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর শুঁটকিপল্লীতে। এবারের মৌসুমে অন্তত ৩০ শতাংশ শুঁটকি কম উৎপাদন হচ্ছে। এতে করে শুঁটকির দামও কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের লালপুর গ্রামে শত বছর ধরে শুঁটকি তৈরি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশপাশ এলাকার হাট-বাজার থেকে কাঁচা মাছ কিনে কেটেকুটে প্রক্রিয়াজাত করে নদীর পাড়ে মাচায় শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। এসব শুঁটকি বাজারজাত করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

লালপুর গ্রামের কয়েকশ পরিবার শুঁটকি উৎপাদন ও বাজারজাতে জড়িত। ফলে গ্রামটি শুঁটকিপল্লী হিসেবেই বেশি পরিচিত। পল্লীতে ছোট-বড় মিলে ব্যবসায়ী আছেন প্রায় ৩০০। প্রতি বছর এ পল্লীতে উৎপাদিত দেশীয় মাছের প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের শুঁটকি বাজারজাত করা হয়। এর মধ্যে ৫০ ভাগই পুঁটি শুঁটকি। আর বাকি ৫০ ভাগ বিভিন্ন মাছের।

শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুঁটকি তৈরির মৌসুম। বছরের এ সময়টাতে শুঁটকি তৈরি এবং বেচাকেনার পাশপাশি স্টক করেন বড় ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে মেঘনা নদীর পাড়ে মাছ প্রক্রিয়াজাত করে ৫০-৬০টি মাচায় শুকানো হচ্ছে। তবে গত বছর নদী ও খাল-বিলে পানি কম থাকায় এবং অতিরিক্ত মাছ শিকারের ফলে মাছ কম হয়েছে। এতে করে হাট-বাজারগুলোতে দেশীয় মাছের যোগানও কিছুটা কম। আর মাছের যোগান কম থাকায় দামও কিছুটা বেশি। প্রত্যেক প্রজাতির মাছের দাম কেজিতে অন্তত ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এছাড়া গত দুই মৌসুমে করোনার কারণে প্রত্যেক ব্যবসায়ী বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। করোনাঘাতের ফলে বিগত মৌসুমে বিক্রিত শুঁটকির সম্পূর্ণ মূল্য এখনও পাননি ব্যবসায়ীরা। এর ফলে ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ অর্থ কম। সেজন্য চাহিদা মতো কাঁচা মাছ কিনতে না পারায় শুঁটকির উৎপাদন কমেছে। কিছুটা বেশি দরে মাছ কেনায় এবার শুঁটকির দামও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রত্যেক শুঁটকিতে কেজি প্রতি অন্তত ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

বর্তমানে শুঁটকিপল্লী থেকে আকার ও মানভেদে পুঁটি শুঁটকি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-৮০০ টাকায়, ট্যাংরা কেজি প্রতি ২০০-৬০০ টাকা এবং চাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে। আর বাইম শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০০-১৫০০ টাকায়, কাইক্কা ৮০০-১৫০০ টাকা এবং গইন্না শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৮০০ টাকা দামে।

লালপুর শুঁটকিপল্লীতে মাছ সরবরাহ করেন মো. সেলিম মিয়া। তিনি জানান, এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে মাছের আমদানি কম। চাহিদার তুলনায় কিছুটা সংকট থাকায় দাম বেড়েছে। প্রত্যেক মাছে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা দাম বেড়েছে। শুঁটকি ব্যবসায়ীরা গত মৌসুমে যে মাছ নিয়েছিলেন, সেই টাকা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি শোধ করতে পারেননি। এর ফলে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মতো মাছ ব্যবসায়ীরাও পুঁজি সংকটে আছেন।

শুঁটকি ব্যবসায়ী উৎপল চন্দ্র দাস জানান, ১০ বছর ধরে তিনি শুঁটকি ব্যবসা করছেন। এবার চারটি মাচায় প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন মাছের শুঁটকি শুকাচ্ছেন। তবে করোনা মহামারি শুরুর আগের সময়গুলোতে ৪-৫ কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি করতেন। বিগত দুই মৌসুমে করোনার কারণে শুঁটকি ব্যবসা ভালো যায়নি। এ সময় অন্তত ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এবার পুঁজি স্বল্পতার কারণে শুঁটকি উৎপাদন কমেছে বলেও জানান তিনি।

আরেক ব্যবসায়ী বিনোদ চন্দ্র দাস জানান, শুঁটকি ব্যবসা করেই তার পরিবার চলে। প্রতি মৌসুমে সব খরচ বাদ দিয়ে ১০-১২ লাখ টাকা আয় হয়। প্রতি মৌসুমে প্রায় দেড় কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি করেন তিনি। কিন্তু এবার মাছের যোগান কম এবং দাম বেড়ে যাওয়ায় শুঁটকির উৎপাদন কমেছে। এর ফলে এবার শুঁটকির দামও বাড়বে। ব্যবসা ভালো হলে বিগত মৌসুমের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বলেন, মাছ কম পাওয়ার দুটি কারণ রয়েছে। একটি প্রাকৃতিক এবং আরেকটি অতিরিক্ত মাছ শিকার। গত বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদী, খাল-বিলে পানি কম ছিল। সেজন্য মাছও কম হয়েছে। এছাড়া পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ শিকারও মাছ কম হওয়ার অন্যতম কারণ। তবে মাছ ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করার জন্য সব সময়ই মাছ সংকটের অজুহাত দেখান।

আপনি আরও পড়তে পারেন